রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে যে, ইউক্রেনের খারসন শহর তারা দখল করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে রাশিয়ার সৈন্যরা পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছে কিনা সেটি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
খারসন অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, রাশিয়ার সৈন্যরা সে এলাকা ঘিরে রেখেছে। মেয়র ইগোর কলিখায়েভ বলেছেন, আমরা এখনও ইউক্রেন। এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছি।
প্রায় ৩ লাখ মানুষের এই শহর যদি রাশিয়ার সৈন্যরা দখলে নেয়, তাহলে সেটি হবে তাদের জন্য বড় ধরনের এক বিজয়। ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সৈন্যদের হাতে পতন হওয়া সবচেয়ে বড় শহর হবে এটি। সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিও হবে। এই শহর থেকে উপকূল বরাবর আরও ভেতরে এবং পশ্চিমের আরেক বৃহৎ বন্দরনগরী ওডেসার সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং একটি শিল্পকেন্দ্র খারসন।
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার বোমা হামলায় অন্তত ২১জন নিহত হয়েছে। খারকিভে চতুর্মুখী আক্রমণ চালিয়েছে রুশ সৈন্যরা। এই শহরের সরকারি-বেসরকারি ভবনের পাশাপাশি বেসামরিক এলাকার আবাসিক ভবনেও হামলা হয়েছে।
টানা তৃতীয় দিনের মতো মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ ছিল। রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির মুদ্রা রুবলের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। সে দরপতন ঠেকানোর জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ রাখা হয়।
জ্বালানী তেলের দাম এখন ব্যারেল প্রতি বৃদ্ধি পেয়ে ১১৩ ডলার হয়েছে। সাত বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ।
রাশিয়ার ক্রেতারা ওয়েবসাইট এবং অ্যাপের মাধ্যমে নাইকির পণ্য অর্ডার করতে পারছেন না। ইউক্রেনে হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান নাইকি রাশিয়াতে তাদের পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন, আমেরিকার আকাশ রাশিয়ার বিমানের জন্য নিষিদ্ধ। স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে বাইডেন বলেছেন, ইতিহাসে দেখা গেছে, আগ্রাসী আচরণের কারণে স্বৈরশাসকরা যদি মূল্য না দেয়, তাহলে তারা আরো বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।
বেলারুশ তাদের সীমান্তে সৈন্য সংখ্যা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে। বেলারুশ সরকার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বেশ ঘনিষ্ঠ।
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, ইউক্রেন দখল করা রাশিয়ার জন্য ‘খুব কঠিন’ হবে।
বিশাল রুশ সেনা বহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সীমানায় পৌঁছে গেছে। রুশ সেনা বহরকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে এ বার ড্রোন নিয়ে হামলা শুরু করেছে ইউক্রেন। আর এই হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে বের্যাকটার টিবি-২ নামে অত্যাধুনিক এবং ঘাতক ড্রোন।
২০২০ সালের নভেম্বরে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে এই ড্রোন ব্যবহার করে আজারবাইজান তাদের সামরিকবাহিনীকে তছনছ করে দিয়েছিল। ওই যুদ্ধে দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছিল এই ড্রোন।
কিন্তু এবার প্রতিপক্ষ রাশিয়া। যাদের বিপুল সামরিক ক্ষমতা। অত্যাধুনিক সমরসজ্জা। ফলে প্রেক্ষিতটাও অনেকটাই আলাদা। রাশিয়ার সেনা বহরে এই ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে একক ভাবে যে সাফল্য এনে দিয়েছিল এই ড্রোন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কি তা পারবে?
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো ফেসবুকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাশিয়া কিয়েভের কাছাকাছি সেনা মোতায়েন শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং কিয়েভকে রক্ষা করব। কিয়েভ দাঁড়িয়ে আছে এবং দাঁড়াবে’।
তিনি শহরের বাসিন্দাদের প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত শহরব্যাপী কারফিউ মেনে চলার কথাও মনে করিয়ে দেন।