ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে জাতীয় সরকার গড়ার আহ্বান মাহমুদুর রহমানের
রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে দ্রুত অপসারণ করে ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার দাবি তুলেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সেই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বাদ দিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সরকার গঠন করার আহ্বান জানান তিনি।
আজ সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ‘ফ্যাসিবাদ উত্তর বাংলাদেশে সংবিধান প্রশ্ন : মুজিববাদ নাকি জনমুক্তি?’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। এই সংলাপের আয়োজন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীর সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তৃতা করেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, সিঙ্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘সংবিধান আমাদের কোনো অধিকার দিতে পারেনি, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। অনেক শহীদ পরিবার আমার কাছে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজ স্বার্থে শহীদদের আত্মত্যাগ কাজে লাগাতে চায়। তাদের ব্যবহার করে তাদের রক্তের ওপর দিয়ে নিজেদের সাম্রাজ্য গড়তে চায়। সেজন্য শহীদদের পরিবারের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে তোমরা কারো প্ররোচণায় প্রলুব্ধ হইওনা। নিজেদের ব্যবহার হতে দিও না। তোমাদের রক্তের বিনিময়ে জনগণ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। অতএব এই অর্জনকে বিলিয়ে দেওয়া যাবে না।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘কোনো দল আপনাদের ক্ষমতায় বসায়নি, এদেশের ছাত্র-জনতা আপনাদের ক্ষমতায় বসাইছে। কীসের ম্যান্ডেট আর কিসের সংবিধান। জনগণের উপর কোনো সংবিধান নেই। সমাধান হিসেবে আমি আপনাদের দুটি প্রস্তাব দিতে চাই। সেগুলো হলো- রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করা ও ড. মুহাম্মদ ইউসূসকে রাষ্ট্রপতি বানিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের বাদ দিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা।’
ড. ইউনুসের উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় সরকার গঠনে যদি রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে না আসে তাহলে সংবিধান সাসপেন্ড করে একটা বিপ্লবী সরকার গঠন করুন।’
শিশু ইয়ামিনসহ অনেক শহীদ পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ায় নিজেকে সম্মানিত বোধ করছেন বলেও জানান মাহমুদুর রহমান। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাঙালি মুসলমানের স্মৃতি খুবই দুর্বল। মাত্র আড়াই মাসে আমরা শহীদদের ভুলতে বসেছি। শহীদ পরিবারগুলো নিদারুণ কষ্ট বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও তাদের কথা আমরা কেউ তুলে ধরছি না। কোনো মিডিয়া তাদের খবর নিয়েছে কি না সেটাও আমার জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিবাদের দোসর সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের এই ভালো কাজকে সমর্থন করতে বিএনপি-জামায়াতের ভয় কোথায়? আপনারা ভোটের হিসাব করছেন? এতদিন কোথায় ছিলো আপনাদের রাজনীতি। এই ছেলেগুলো জীবন না দিলে আমি নিজেও এখানে আসতে পারতাম না।’
মাহমুদুর রহমানের বক্তব্যের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ দিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যেখানে পুলিশের গুলিতে নিহত শিশু ইয়ামিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজলসহ অনেক শহীদের আত্মত্যাগ ও পুলিশের নির্মমতা উঠে আসে।