কক্সবাজার সমুদ্রে ভাসছে মৃত তিমি

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের হিমছড়ি উপকূলে একটি বিশালাকৃতির মৃত তিমি ভেসে এসেছে । তবে এখনো তিমিটি উপকূলের অগভীর জলে রয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বেলা ১২ টা নাগাদ তিমিটি সমুদ্রে দেখতে পান স্থানীয়রা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।

তিনি জানান, তিমিটি এখনো অগভীর জলে রয়েছে। ড্রোন ইমেজের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায় ভেসে আসা মৃত তিমি ব্রাইডস জাতের। এর বৈজ্ঞানিক নাম বেলিনিওপেট্রা ইডিনি। ইতোপূর্বে ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল দুইটি তিমি হিমছড়ির ঠিক একই পয়েন্টে ভেসে এসেছিল। যে দুটি তিমি গত বছর ভেসে এসেছিল সেগুলোও বেলিনিওপেট্রা ইডিনি প্রজাতির তিমি ছিল বলে আমরা ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিলাম।

বেলাল হায়দার বলেন, ভেসে আসা তিমির শরীরে পঁচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শরীরে জালের বিশাল রশি পেঁচিয়ে আছে। মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে মাছ ধরার বিশাল জালে আটকা পড়ে এবং গুরতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে কিংবা অন্যকোন কারণে তিমিটি মারা গেছে। তিমি সাধারণত মৎস্য শিকারীদের জালে আটকা পড়ে,জাহাজের সাথে সংঘর্ষে কিংবা সমুদ্র শব্দ দূষণের কারনে পরষ্পর যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে উপকূলের অগভীর জলে এসে আটকা পড়ে মারা যায়। কখনো সঙ্গীর মৃত্যু হলেও এদেরকে সৈকতের অগভীর জলে আত্মহুতি দিতেও দেখা যায়। এখনো উপকূলের অগভীর জলে ভাসছে বিধায় মৃত তিমিটির পর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ করা ও নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিউটের বিজ্ঞানীরা অকুস্থলে রয়েছেন। সন্ধ্যা নাগাদ তিমিটি সৈকতে ভেসে আসবে বলে আমাদের ধারণা।

তিনি বলেন, এ প্রজাতির তিমির দাঁত নাই। মুখের মধ্যে চিরুনির মতো একটি অংশ দিয়ে খাবার প্রক্রিয়াজাত করে।

তিমির বিচরণের জন্য গভীর ও ঈষৎউষ্ণ জলের প্রয়োজন। সে কারণে ভারত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে তিমির বিচরণের সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হিসেবে মনে করা হয়। এরা কখনো একাকী, কখনো যুগলবন্দী কিংবা দলবদ্ধ হয়ে বাস করে।

সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার আরো জানান, বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উত্তর প্রান্ত ও এর আশপাশের এলাকা, কক্সবাজারের পশ্চিমে এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রেও ব্রাইডস প্রজাতির তিমির দেখা পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এ তিমির প্রজননক্ষম একটি বড় কলোনি বঙ্গোপসাগরের গভীরে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড ও এর আশপাশের এলাকাজুড়ে বসবাস করছে।

আমাদের দেশের উপকূলীয় নদীগুলো দিয়ে সারা বছর ধরে পরিবাহিত নিউট্রিয়েন্ট বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড এলাকায় গিয়ে জমা হয়। এসকল নিউট্রিয়েন্ট অসংখ্য প্রজাতির অণুজীব, মাছ, চিংড়ি জাতীয় প্রাণীসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্যের জোগান দেয়। আর তিমির জন্য এগুলোই প্রধান খাবার।ফলে খাবারের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় এ অঞ্চলে তিমির প্রজননক্ষম একটি কলোনীর বিচরণ রয়েছে বলে গবেষকরা ধারণা করেন। তবে গভীরতা কম থাকায় বাংলাদেশর উপকূল এলাকায় এরা খুব একটা আসে না। বিশাল দেহ ও পর্যাপ্ত খাবারের সরবরাহ থাকায় এরা গভীর সমুদ্রের এলাকাতেই বিচরণ করতে পছন্দ করে।

খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান।

কক্সবাজার পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায় মৃত তিমিটি এখনো সাগরের অগভীর জলে রয়েছে। এটি পচে গিয়ে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।তাই এটিকে গর্ত করে পুঁতে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি ও ইনানি পয়েন্টে দুটি মৃত তিমি ভেসে এসেছিল

পূর্বের খবররামুতে বন্ধুর সুন্দরী স্ত্রী নিয়ে উধাও আরেক বন্ধু শিবু
পরবর্তি খবরসমুদ্র সৈকতের অসুস্থ ঘোড়া জবাই করে গরু বলে বিক্রি করতেন উখিয়ার মাহাবুব