ইউনিয়ন হসপিটাল’র সংবাদ সম্মেলন

নুরুল হুদার দুর্নীতি রূপকথার গল্পকেও হার মানায়
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
ইউনিয়ন হসপিটাল কক্সবাজার পিএলসি থেকে দুর্নীতির দায়ে অপসারিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল হুদার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউনিয়ন হপিটাল কক্সবাজার পিএলসি’র উপদেষ্টা এডভোকেট গোলাম ফারুক খান কায়ছার।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ইউনিয়ন হসপিটালের ইন্টারনাল অডিটে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীর ২৭তম সভায় পরিচালনা পর্ষদের সর্বসম্মতিক্রমে দুর্নীতির দায়ে এমডি নুরুল হুদাকে অপসারণ করা
হয়। অডিট কমিটি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে, তা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। তাই তার সাথে লেনদেন করার আগে ডিজিটাল হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও ইউনিয়ন হাসপাতালে তার দুর্নীতির ইতিহাস
জেনে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, কোম্পানীর ২৭তম সভায় পরিচালনা পর্ষদের সর্বসম্মতিক্রমে নতুন এমডি নির্বাচিত হন আব্দুল্লাহ আল মুকিত চৌধুরী।
যিনি এর আগের পর্ষদে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। মাসিক ২৭তম এই সভায় পরিচালনা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো দুর্নীতির দায় ধামাচাপা দিতে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনাব মুকিতকে নতুন এমডি নির্বাচিত করা এবং নুরুল হুদাকে অপসারণের বিষয়টিকে বেআইনি উল্লেখ করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তিনি (নুরুল হুদা), যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। স্থানীয় একটি দৈনিকে নুরুল হুদা তার প্রতিবাদলিপিতে বর্তমান পরিষদকে অবৈধ দাবী এবং তার দেওয়া অর্থ সম্পদের বর্ণনা সম্পূর্ণ হাস্যকর। এছাড়া নিজেকে নির্দোষ দাবি করেও বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশন করছেন দূর্নীতির দায়ে অপসারিত এমডি নুরুল হুদা। কিন্তু ইউনিয়ন হাসপাতালের বিভিন্ন খাত থেকে তার দুর্নীতির ফিরিস্তি বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। তারপরও আপনাদের অবগতির জন্য নুরুল হুদার
দুর্নীতির আংশিক চিত্র তুলে ধরা হলো। এছাড়াও হসপিটালের পক্ষ থেকে নিয়োজিত
স্বাধীন অডিট ফার্ম বর্তমানে অডিট কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের প্রতিবেদন
সামনে আসলে নুরুল হুদার দুর্নীতির প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।

২০১৯ সালে যাত্রার পর থেকে নুরুল হুদা ইউনিয়ন হসপিটালের এমডি। নিজের
ক্ষমতাকে আরো বেগবান করার জন্য শুরু থেকেই নুরুল হুদা রাজনৈতিক
ব্যক্তিদের চেয়ারম্যান পদসহ বিভিন্ন পদে বসিয়ে ইচ্ছে মতো লুটপাট
চালিয়েছেন। শুরুতে চেয়ারম্যান পদে বসানো হয় তাঁতী লীগের সভাপতি আরিফ উল
মওলাকে। এরপর আরিফ উল মওলাকে সরিয়ে বসানো হয় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক
সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ইশতিয়াক আহমেদ জয়কে।

নুরুল হুদা নিজেও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। বর্তমানে
তিনি জেলা তাঁতী লীগের দপ্তর সম্পাদক। সেই সুবাদে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের
প্রভাবশালী নেতাদের চেয়ারম্যান, ডিএমডিসহ বিভিন্ন পদে বসিয়ে বিপুল টাকা
আত্মসাত করেছেন। নুরুল হুদা সিন্ডিকেট হাসপাতালে লুটপাট চালালেও পরিচালনা
পর্ষদের কেউই মুখ খুলতে পারেনি। কারণ তারা নিয়মিত তাদের পালিত অবৈধ
অস্ত্রধারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হাসপাতালে আনাগোনা রাখতেন এবং ভীতিকর
পরিবেশ তৈরী করে রাখতেন, যাতে কেউ মুখ খুলতে না পারে। যার ফলে ভয়াবহ
অনিয়ম দুর্নীতি হলেও কোনকিছু সামনে আনতে পারেনি কেউই। কারণ যে-ই মুখ
খোলার চেষ্টা করতেন, তাকেই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রাণনাশের হুমকি
এবং বিভিন্ন বিষয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন নুরুল হুদা। কিন্তু
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর পরিচালনা
পর্ষদের নিরপেক্ষ এবং লুটপাট বিরোধী পরিচালক ও দায়িত্বশীলরা ধীরে ধীরে
তার দুর্নীতির ফিরিস্তি বের করার চেষ্টা করে, যা এখনো চলমান।

বেশ কিছুদিনের চেষ্টায় নুরুল হুদার গত ২ বছরের আংশিক দুর্নীতির প্রমাণ
পেয়েছে ইন্টারনাল অডিট কমিটি। পূর্ণাঙ্গ তদন্তে সবিস্তারে উঠে আসবে।

ইন্টারনাল অডিটে উঠে আসা আংশিক দুর্নীতির চিত্র:

সেবার ব্রত নিয়ে শুরু করা ইউনিয়ন হাসপাতালের আয় থেকে মদের বিল পরিশোধ
করার মতো জঘন্য কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি নুরুল হুদা। বিজনেস প্রমোশন
বিলের নামে কক্সবাজারের নামীদামী হোটেলে মদের বিল পরিশোধ করেছেন
প্রতিমাসে।

অগোচরে শেয়ার তুলে নেওয়া:

কাগজে কলমে নুরুল হুদা নিজের নামে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছিলেন
ইউনিয়ন হসপিটালে। কিন্তু কার্যকরী পরিষদের অজান্তে এবং মাসিক মিটিংয়ে
উত্থাপন ছাড়াই ৩০ লাখ টাকা তুলে নেন তিনি, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

বিনিয়োগ প্রতারণা:

২০১৯ সালে ইউনিয়ন হাসপাতালের যাত্রা শুরুর সময় অগ্রীম সম্মানি বাবদ মূল
বিনিয়োগ থেকে ৪২ লাখ টাকা তুলে নিয়ে সেই টাকা আবার হাসপাতালে তার বিনিয়োগ
হিসেবে প্রদান করে উদ্যোক্তা শেয়ার দেখিয়েছেন, যা অনেকটা আয়নাবাজির মতো।

হাসপাতালের টাকায় মদের বিল পরিশোধ:

দুর্নীতির টাকায় নুরুল হুদা আলিশান জীবনযাপন করেন। সমাজের বিত্তশালী এবং
প্রভাবশালীদের কুক্ষিগত করে রাখতে নিয়মিত মদের আসরে বসতেন বিভিন্ন
হোটেলে। সেই মদের বিল পরিশোধ করা হতো হাসপাতাল থেকে। অডিট কমিটির
প্রাথমিক হিসাব মতে, গত ১৬ মাসে অন্তত ৮ লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করেছেন
নুরুল হুদা।

হাসপাতালের টাকায় স্বপরিবারে অবকাশ যাপন:

নুরুল হুদা তাঁর স্ত্রী নারগিস ফারহানাকে নিয়ে আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী
মোশাররফ হোসেনের মালিকানাধীন আবাসিক হোটেল ‘সায়মান হ্যারিটেজে’ অবকাশ
যাপন করেন, যার বিল পরিশোধ করা হয় ১ লাখ ৬ হাজার টাকা। যা বোর্ড মিটিংয়ের
নামে বিল করা হয়েছে। অথচ সেখানে কোন বোর্ড মিটিং হয়নি। বোর্ড মিটিং এ এই
খরচ গোপন করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্সের বিল পরিশোধ হাসপাতাল থেকে:

ইউনিয়ন হাসপাতালের মালিকানাধীন কোন বৈধ অস্ত্র না থাকলেও নুরুল হুদা
ব্যক্তিগত বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে নিয়েছেন আড়াই
লাখ টাকা। এই অস্ত্রের ভাড়া হিসেবে প্রতিমাসে হাসপাতাল থেকে খরচ
দেখিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা করে, যা ১৫ মাসে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।
ডিরেক্টরদের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে গোপনে এসব টাকা হাসপাতাল থেকে
নিয়েছেন নুরুল হুদা।

ব্যক্তিগত গাড়ির তেল খরচ:

হাসপাতালের কোন গাড়ি না থাকলেও নুরুল হুদা ব্যক্তিগত গাড়ির তেলের বিল নেন
হাসপাতাল থেকে। প্রতিমাসে তেল খরচ বাবদ প্রতিমাসে ৩৫ হাজার টাকা করে ১৬
মাসে হাসপাতাল থেকে তেল খরচ তুলেছেন ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

ইউনিয়ন হাসপাতালের গাড়ি না থাকায় ড্রাইভারও থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু নুরুল হুদা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গাড়ির ড্রাইভারের জন্য
প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে ১৬ মাসে সর্বমোট ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা
উত্তোলন করেছেন হাসপাতাল থেকে। ডিরেক্টরদের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে-
গোপনে এসব টাকা হাসপাতাল থেকে নিয়েছেন নুরুল হুদা।

বডিগার্ডের বিল পরিশোধ:

ভিআইপি বা সিআইপি না হয়েও ব্যক্তিগত বডিগার্ড রেখেছেন নুরুল হুদা। সেই
বডিগার্ডের বেতন প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে হাসপাতাল থেকে ২৫ মাসে
পরিশোধ করেছেন ৫ লাখ টাকা।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইউনিয়ন হাসপাতালের এমডি পদ কুক্ষিগত করে রাখেন নুরুল
হুদা। তিনি এমডি পদের সম্মানী বাবদ প্রতিমাসে নেন ২ লাখ টাকা। কিন্তু এত
মোটা অংকের সম্মানী নিয়েও পেট ভরেনি নুরুল হুদার। প্রতিদিন আপ্যায়ন বিলের
নামে ৫ হাজার টাকা করে নিতেন হাসপাতাল থেকে। সর্বশেষ গত ৪০০ দিনে ২০ লাখ
টাকা আপ্যায়ন খরচ দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন নুরুল হুদা। কোম্পানীর
ডিরেক্টরদের এ বিষয়ে কিছুই জানতে দেয়া হয়নি।

হাসপাতালের টাকায় বিদেশ ভ্রমণ:

নুরুল হুদা ভ্রমণ বিল বাবদ একবার ৩ লাখ টাকা এবং আরেকবার ২ লাখ ৪২ হাজার
টাকা উত্তোলন করেন হাসপাতাল থেকে। এই টাকা দিয়ে তিনি মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন
দেশে ব্যক্তিগত ভ্রমণ করেছেন। কোম্পানীর ডিরেক্টরদের কাছ থেকে এসব খরচ
গোপন রাখা হতো। বোর্ড মিটিং-এ কোন ডিরেক্টর এ প্রসংগে জানতে চাইলে,
বিভ্রান্তিমূলক উত্তর দিতেন নুরুল হুদা।

নিজের বাসার বিদ্যুৎ বিল:

নুরুল হুদা নিজের ব্যক্তিগত সকল প্রয়োজনীয়তা মিটিয়েছেন হাসপাতাল থেকে। গত
প্রায় ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের বাড়ির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন
হাসপাতাল থেকে।

কেনাকাটায় কমিশন বাণিজ্য:

হাসপাতালের যাবতীয় রিএজেন্ট ও যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন কেনাকাটার একক
নিয়ন্ত্রক ছিলেন দুর্নীতির দায়ে অপসারিত এমডি নুরুল হুদা। তার পছন্দের
ভেন্ডরদের কাছ থেকেই ইউনিয়ন হাসপাতাল ক্রয় করতেন। প্রতিটি ভেন্ডর
প্রত্যেকটি পণ্যে তাকে বিভিন্ন অংকের কমিশন দিতেন, সেকারণে বাড়তি দাম
পরিশোধ করতে হতো হাসপাতালকে। কিন্তু নুরুল হুদা অপসারিত হওয়ার পর থেকে
কমিশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কেনাকাটায় বড় ধরণের ব্যয় কমে এসেছে।

উপর মহল ম্যানেজের কথা বলে কোটি কোটি টাকা লোপাট:

নুরুল হুদা বিভিন্নভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে রাখতেন। সেই কৃত্রিম সংকটে
হাসপাতালকে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। কেউ বিরোধীতা করলে
নানাভাবে হয়রানি এবং মেরে ফেলার হুমকি দিতেন তার পালিত সন্ত্রাসী ফয়সালসহ
অন্যান্যরা। উপর মহল ম্যানেজের কথা বলে মোটা অংকের টাকা তুলে নিতেন
নিয়মিত।

উল্লেখিত দুর্নীতি ও লোপাটের এই হিসাবগুলো গত দুই বছরের। এরমধ্যেও দুই
বছরের পুরো দুর্নীতির চিত্র আসেনি। এর বাইরে আরো ৩ বছরের দুর্নীতির হিসাব
তদন্তাধিন রয়েছে। হাসপাতালের নিয়োগকৃত স্বাধীন অডিট ফার্মের অডিট
প্রতিবেদন চ‚ড়ান্তভাবে সম্পন্ন হলে নুরুল হুদার দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র
বেরিয়ে আসবে। আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে তার আর্থিক কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে
আইনগত পদক্ষেপ নেবো।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে- বিভিন্ন ভুয়া খাত দেখিয়ে তিনি এত বিপুল
টাকা উত্তোলন করলেন কিভাবে? বর্তমান ডিরেক্টর (ফিন্যান্স) জনাব, আল মামুন
কোম্পানীর শুরু থেকেই একই পদে আছেন। বিভিন্ন বেনামি বিল উত্তোলনের বিষয়ে
কয়েকবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফ্যাসিস্ট
হাসিনা সরকারের এসব দোসররা সার্বক্ষণিক অবৈধ অস্ত্র এবং সন্ত্রাসী দ্বারা
সজ্জিত থাকতেন। হাসপাতালে তার পালিত সন্ত্রাসীদের নিয়মিত যাতায়াত ছিলো।
কয়েকবার যখন তিনি বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন তখন অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি
দেখান। প্রায় সময় ভীতিকর পরিবেশ তৈরী করে রাখতেন, যাতে মুখ খোলার সাহস না
করে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক পরিচালক ও দায়িত্বশীলদের জানালে তারাও মুখ খুলতে
পারেনি।

নুরুল হুদার আশ্রয়ে হাসপাতালে যুবলীগ নেতার মদের আসর:

নুরুল হুদা তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য হাসপাতালের পরিচালক ও
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের ক্ষমতায়িত
করতেন। এই ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন পদে বসাতেন। সেরকমই একজন
যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল। নুরুল হুদার আশ্রয়ে থেকে ফয়সাল
হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে মদের আসর বসাতেন। মধ্যরাতে পালস চেক করার নামে
নার্সদের ডেকে পাঠাতেন। ফয়সালের হাতে অনেক নারীকর্মী যৌন নির্যাতনের
শিকার হয়েছেন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। হাসপাতালের গঠিত তদন্ত
কমিটিও এসবের প্রমাণ পেয়েছে।

৮ লাখ টাকার দেনাদার থেকে কোটিপতি:

নুরুল হুদা ইউনিয়ন হাসপাতালে উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যোগ দেয়ার
আগে কক্সবাজার শহরের ডিজিটাল হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে
পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে  সেন্ট্রাল হাসপাতাল
নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হয়েছিলেন। ওই দু’টি প্রতিষ্ঠান থেকে
আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগে তাকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের দিকে
যখন ইউনিয়ন হাসপাতালের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয় তখন সেখানে উদ্যোক্তা
শেয়ারহোল্ডার হিসেবে অংশীদার হন। সে সময় নুরুল হুদার কোন সম্পদ তো ছিলই
না, উল্টো প্রায় ৮ লাখ টাকার দেনা নিয়ে ঘুরছিলেন।  মাত্র ৫ বছরের
ব্যবধানে সেই নুরুল হুদা এখন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। আমাদের
জানামতে, এই মুহুর্তে নুরুল হুদার রয়েছে কক্সবাজার শহরের উমে মার্কেটের
পেছনে প্রায় ২৬০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট, সায়মান হেরিটেজের পাশে একর্ড
হোল্ডিংয়ে প্রায় ২৬০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, কলাতলীতে কক্সবাজার উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত প্রায় ১৩৮৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, শহরের এসএম
পাড়ায় কয়েক বিঘা জমি, নাইক্ষ্যংছড়িতে অর্গানিক ফার্মে বিনিয়োগ,
নাইক্ষ্যংছড়িতে গ্রীণভ্যালী নামক বাগানে বিনিয়োগ, মেরিগোল্ড হ্যাচারিতে
কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ, কলাতলী এলাকায় এম এম ট্রেডিং নামে হ্যাচারি
ক্যামিকেলের দোকান ও এক্স-ট্রায়াল নামের অর্ধকোটি টাকা মূল্যের গাড়ি।

নবনির্বাচিত এমডি আবদুল্লাহ আল মুকিত চৌধুরী আসলে কে?

নুরুল হুদা তার অপপ্রচারে উল্লেখ করেছেন বর্তমান এমডি আব্দুল্লাহ আল
মুকিত চৌধুরী জোরপূর্বক পদটি দখল করেছেন। যা ডাহা মিথ্যা এবং হাস্যকর।
প্রকৃত সত্য হলো, ইউনিয়ন হাসপাতাল ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করলেও ২০১৬
সালের প্রথম পরিকল্পনার সময় যেক’জন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেন তার মধ্যে
আব্দুল্লাহ আল মুকিত চৌধুরী একজন। মুকিত তিন দফায় বিনিয়োগের ২০ লাখ টাকা
পরিশোধ করেন। এরমধ্যে প্রথম দফায় ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন ২০১৬ সালের ১৫
অক্টোবর, দ্বিতীয় দফায় পরিশোধ করেন ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল ৫ লাখ টাকা এবং
সর্বশেষ পরিশোধ করেন ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর ১০ লাখ টাকা। হাসপাতাল শুরুর
পর থেকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা লুটপাট করার পথ সুগম রাখার জন্য তাকে সামনে
আসতে দেয়নি। সর্বশেষ ৫ আগস্টের পর সাবেক এমডি নুরুল হুদার নেতৃত্বে ২৫তম
বোর্ড সভায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় জনাব আবদুল্লাহ আল মুকিতকে।
পরে গত ২৭তম মাসিক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে এমডি হিসেবে নির্বাচিত করে
পরিচালনা পর্ষদ। তিনি কোন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়।

ছাত্র আন্দোলন দমাতে হুদার ভূমিকা:

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন নুরুল হুদা আন্দোলন দমাতে
আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন আওয়ামীলীগকে। একইসাথে তার লাইসেন্সধারী অস্ত্রও
ছাত্র আন্দোলনে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে এসব খবর ফলাও করে
প্রচারিত হয়েছে।

ছাত্র আন্দোলন দমাতে গিয়ে আহত হওয়া সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি
সন্ত্রাসী রিফাতের চিকিৎসা সেবায় আর্থিক সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে নুরুল
হুদার বিরুদ্ধে।

নুরুল হুদা একজন স্বাস্থ্যখাতের চিহ্নিত মাফিয়া, প্রতারক ও অর্থ
আত্মসাতকারী। তার ফাঁদে পড়ে অনেক বিনিয়োগকারীর স্বপ্ন বিলীন হয়েছে।
আয়নাবাজি করে নিজে এক টাকাও বিনিয়োগ না করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে
নিয়েছেন তিনি। যেমনটা করেছেন- ডিজিটাল এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালে। তাই তার
ভুল ও মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়ার পূর্বে আপনারা দয়া করে একবার ইউনিয়ন,
ডিজিটাল এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালে খোঁজ নেবেন, তাহলে জানতে পারবেন- নুরুল
হুদা একজন কতবড় প্রতারক, দুর্নীতিবাজ ও অর্থ আত্মসাতকারী।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের
উত্তর দেন- ইউনিয়ন হসপিটাল কক্সবাজার পিএলসি’র চেয়ারম্যান এডভোকেট তবারক
হোসাইন, উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান নছরুল্লাহ, ভাইস
চেয়ারম্যান জুনাইদ কাদের, ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল্লাহ আল মুকিত চৌধুরী,
ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর খোরশেদ আলম, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর
মোহাম্মদ শাহ জাহান, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বেলাল উদ্দিন, ডিরেক্টর
এইচআর এডভোকেট মোসলেম উদ্দিন ভুঁইয়া, ডিরেক্টর ফিন্যান্স আল মামুন,
ডিরেক্টর অপারেশন এনামুল হক, ডিরেক্টর মার্কেটিং এন্ড প্রমোশন মোয়াজ্জেম
হোসাইন সাকিল, ডিরেক্টর মেহেদী হাসান মুন্না, ডিরেক্টর নুরুল হক জিয়া,
ডিরেক্টর মাহবুব মোর্শেদ, বদরমোকাম জামে মসজিদের প্রতিনিধি নুরুল হক
চকোরী।

পূর্বের খবরজমকালো আয়োজনে দৈনিক গণসংযোগ এর বার্ষিক মিলনমেলা সম্পন্ন
পরবর্তি খবরমাহে রামাদান কে স্বাগত জানিয়ে জেলা ব্যাপী জামায়াতের মিছিল