
দেশে বড় ধরণের কোনো দুর্যোগ আসলে, সংকট বা বিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দেশবাসী যখন উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে, তখন দুর্যোগ বা সংকট মোকাবেলার যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে হাসিনা বন্দন শুরু করেন সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী দলের নেতা ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতারা। তাদের ভাষায়, শেখ হাসিনার মতো প্রধানমন্ত্রী আছে, সে দেশে কিছুই আসবে না। দেশে কোনো সংকট বা দুর্যোগ আসবে না। আর আসলেও টিকবে না।
এই তো, করোনার শুরুতে নৌপরিবহন মন্ত্রী খালেদা মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, যেদেশে শেখ হাসিনার মতো নেত্রী প্রধানমন্ত্রী, সেদেশে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। আর মো. নাসিম তো প্রায় প্রতিদিনই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন। দেশে শেখ হাসিনা আছেন, আর কোনো সমস্যা নাই। শেখ হাসিনাই সব সমস্যার সমাধান দিতে পারবে। এসব উক্তি থেকে বাদ পড়েননি হাসানুল হক ইনুও। তিনি বলেছেন, হাসিনার ওপর ভরসা রাখুন।
তবে, আ.লীগ নেতাদের তোষামোদিকে ছাপিয়ে গেছেন মেডিকেল এসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব ডা. কামরুল হাসান মিলন।
গত ৩০ মার্চ রাতে সময় টেলিভিশনের টকশোতে ডা. কামরুল হাসান মিলন বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়াতে করোনার বেশি প্রভাব পড়বে না। আমরা এজন্য আশাবাদী যে বাংলাদেশে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন যিনি সকালে তাহাজ্জুদ পড়ে দিন শুরু করেন। দেখুন সংযুক্ত ভিডিও 42মিনিট 50 সেকেন্ড হতে।
শুরু থেকে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য গোপন করে আসলেও করোনার বিস্তার এসব মন্ত্রী এমপিদেরকে অসহায় করে তুলেছে। দেখা যাচ্ছে, দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন দ্বিগুন বাড়ছে। সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, দেশে নতুন আরও ৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বশেষ খবরে দেখা গেছে, ওই ৫ জনের বাইরে চট্টগ্রামে একজন, ঢাকায় একটি টেলিভিশনের ফটো সাংবাদিক ও একজন র্যাব সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি তথ্যমতে মাত্র ৬ জন হলেও বাস্তবে তার তিনগুন।
করোনার এই বিস্তার সরকার চাইলেও এখন ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারছেনা। চীন সরকার প্রথম থেকে তথ্য গোপন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা এ থেকে শিক্ষা না নিয়ে তারাও সরকারের দুর্বলতা ঢাকতে তথ্য গোপন করে নিজেদের করোনার চেয়ে শক্তিশালি দাবি করে আসছিলো। কিন্তু প্রাণঘাতী এই মহামারির কাছে এখন আসহায় পড়েছে তারা।
মাসের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আমরা করেনার চেয়ে বেশী শক্তিশালি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই নিজেই আবার স্বীকার করে নিলেন। গতকাল ওবায়দুল কদের বলেছেন, “করোনাভাইরাস সংকটের কারণে সারা বিশ্ব এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে। জাতিসংঘের মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে এমন ভয়াবহ সংকট কখনও সৃষ্টি হয়নি। কবে যে এই সংকটের শেষ হবে এটা এখনও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্ব এগিয়ে চলছে। এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেশে দেশে, সংকট আরও ঘনীভূত করছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ধর্মনিয়ে এমন আচরণ এবার নতুন নয়। বিভিন্ন সময় তাদের ধর্ম নিয়ে এমন মন্তব্যের দাঁত ভাঙা জবাব দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, ওবায়দুল কাদেররা এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। আর শেখ হাসিনার সকালের তাহাজ্জুদ এখন করোনাকে ঠেকাতে পারছেনা। আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, তাহাজ্জুদের নামাজ কি সকালে পড়তে হয়? শেখ হাসিনাসহ তার নেতারা ধর্মকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করে। আবার স্বার্থ ফুরালে ধর্ম বিদ্বেষ শুরু করে। তারা বলছেন, বিগত দিনে যে পরিমাণ মানুষ খুন ও গুম করেছে, এসব অপকর্মের কারণেই আজ দেশের এই অবস্থা।
অ্যানালাইসিস বিডি