চরপাথরঘাটার চেয়ারম্যান পুত্রের খুলশী ফ্ল্যাট থেকে গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার

নগরীর দক্ষিণ খুলশী এলাকার একটি ফ্ল্যাটের সানশীট থেকে আমেনা (২০) নামে এক গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাটি ঘটলেও জানাজানি হয় পরে। গণমাধ্যমকর্মীরা ঈদের ছুটিতে থাকায় ঘটনাটি সে সময় ধামাচাপা ও জানাজানি হয় কম।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা।

জানা যায়, দক্ষিণ খুলশীর ২ নম্বর রোডের ১০১ নং র‍্যাংগস এফসি বাড়ির বি-৬ ফ্ল্যাটে বসবাস করেন চরপাথরঘাটার ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমদের বড় ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (৩২)। তিনি একজন মৎস্য ব্যবসায়ি।

নিহত আমেনার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া রাজারহাট এলাকার সর্দারবাড়ী। তার পিতার নাম হাবিবুর রহমান ও মাতার নাম আঁখি আক্তার। আমেনা ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন প্রায় আড়াই মাস আগে।

এ ঘটনার পরের দিন রাতেই ফ্ল্যাটের মালিক সাইফুল ইসলাম নিজেই বাদী হয়ে খুলশী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার জিআর মামলা নম্বর-২২/২৩ ইং।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি নিহত আমেনা (১৪) নামক মেয়েটিকে সাইফুলের বাসায় বেতনভুক্ত গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত করেন। আমেনার পিতার সাথে তাঁর মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বর্তমানে তাঁর মা ওমান প্রবাসী।

অপরদিকে, ঘটনায় জড়িত বিবাদী মো. ফাহিম (২০) এর বাড়ী ফ্ল্যাট মালিক সাইফুলের একই এলাকায়। সে গত ২ বছর যাবত এ বাসায় কাজ করেন। ঘটনার রাতে ১৭ এপ্রিল গৃহকর্তার পরিবারের সবাই সেহেরী শেষ করে ভোর ৫ টার দিকে ঘুমাতে যান।

পরের দিন সকাল অনুমান সাড়ে ৮ টার দিকে বিল্ডিংয়ের ইলেকট্রিশিয়ান মো. সামী গৃহকর্তার মোবাইলে ফোনে কল দিয়ে জানান, বাসার গৃহকর্মী আমেনা ৬ষ্ঠ তলা থেকে ব্যালকনি দিয়ে পড়ে ২য় তলার সানশিটের উপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

ইলেকট্রিশিয়ার আরো জানান, ঘটনার সময় পালানোর চেষ্টাকালে অপর গৃহকর্মী মোঃ ফাহিম কে আবাসিক এলাকার মুখ থেকে স্থানীয়রা আটক করেছে। গৃহকর্তা এ কথা শোনে বিল্ডিংয়ের নিচে নেমে এসে দেখে গৃহকর্মী আমেনা গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। গৃহকর্মী মোঃ ফাহিম কে স্থানীয় লোকজন আটক করে রেখেছে।

লোকজনের সামনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, বিবাদী মোঃ ফাহিম (২০) ভিকটিম আমেনা (১৪) কে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বিষয়টি আমেনা পুলিশ কে জানাবে বললে, বিবাদী ফাহিম ভিকটিম কে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরলে আমেনা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে জ্ঞান ফিরলে ভিকটিম কে বাসার ব্যালকনি দিয়ে নিচে ফেলে দেন।

এ সময় গৃহকর্মী আমেনা বিল্ডিংয়ের ৬ষ্ঠ তলা থেকে ২য় তলার সানশিটে উপর পড়ে রক্তাক্ত হয়। ওখান থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে চটগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গৃহকর্মী আমেনা কে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এমনকি মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা সনদপত্রে (BROUGHT IN DEAD TO FALL FROM HEIGHT) উঁচু জায়গা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘কাজের ছেলে কাজের মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে না পেরে ব্যালকনি দিয়ে বাহিরে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে জবানবন্দীও দিয়েছেন তিনি।’

চেয়ারম্যান পুত্র তাঁর দায়ের করা এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ করলেও পুলিশ বলছেন ভিন্ন কথা। তবে এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী ও ফ্ল্যাটের মালিক মো. সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি জানান, ‘আমার বক্তব্য মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। আমি আমার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করি। ছেলেটির সাথে মেয়েটির কোন পূর্ব সম্পর্ক ছিল না। এমনকি মেয়েটির কোন অভিভাবক না থাকায় ভিকটিমের মায়ের ইচ্ছায় আমি মামলা করেছি।’

পূর্বের খবরকক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তি খবরকঠিন পরীক্ষায় বিএনপি