সরকার সর্বোচ্চ পদে থাকা ১১ জন গুরুত্বপূর্ণ আমলার বিদেশে বাড়ি এবং সম্পদের তথ্য পেয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন যে সমস্ত ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা বিদেশে বাড়ি আছে তাদের তালিকা চেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, তাদের কাছে এরকম সুনির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে এবং এই তালিকাটি আরও যাচাই-বাছাই করে তারা খুব শিগগিরই দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করবে। উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন সময় কানাডার বেগম পাড়ায় বাঙ্গালিদের বাড়িঘর নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। এসব কথাবার্তার প্রেক্ষিতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেগম পাড়ায় কাদের বাড়িঘর আছে সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের আলোকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন মিশনগুলো বিভিন্ন দেশে বাঙ্গালিদের কারা কারা বাড়িঘর করেছে তার একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছিল। এই তালিকাটি তৈরি করার পর দেখা যায় যে, এ তালিকায় অধিকাংশই সরকারি কর্মকর্তা বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।
এরপর গত বছরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন প্রথম গণমাধ্যমের কাছে বলেন যে, আমরা আগে মনে করতাম যে, রাজনীতিবিদদেরই বোধহয় বিদেশে বাড়িঘর। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম যে, আমলাদের বাড়িঘরই বেশি। বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে যে, এই খোঁজ নেওয়ার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনের হইচই উঠে এবং এর পরপরই দুর্নীতি দমন কমিশন এই তালিকাটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চায়। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তালিকাটি আরও যাচাই-বাছাই করার পর দেখেছে যে, অন্তত ২৩ জন আমলার বিদেশে বাড়িঘর এবং স্থাপনা রয়েছে। অন্তত ১৩৭ জন আমলার সন্তান-সন্ততিরা বিদেশে লেখাপড়া করেন এবং ১১ জন আমলার বিদেশে বাড়িঘর আছে। যে ১১ জন আমলার বাড়িঘর আছে তারা বৈধ পথে বাড়িঘর করেননি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্দেহ করছে। আর এ কারণেই এই ১১ জনের তালিকাই শুধুমাত্র দেওয়া হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে, যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকের সন্তান বিদেশে লেখাপড়া করতেই পারেন। অনেক ক্ষেত্রেই বৃত্তি নিয়ে বা বিদেশে যেয়ে কষ্ট করে নিজেরাই লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করে। সেটি তারা অবৈধ পন্থায় উপার্জনের অর্থ দিয়ে বিদেশে লেখাপড়া করছে কিনা সেটি আরও তদন্তের বিষয়।
আবার অনেকের পরিবারের সদস্য রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন ধরেই আত্মীয়-স্বজন বিদেশে বসবাস করতো। সেই সূত্রে তারা সেই দেশে যায় বা সেই দেশে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু ১১ আমলার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে যারা বিদেশে বাড়ি করেছেন এবং এই বাড়ি দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থেই করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে। এই বাড়িঘর যে শুধুমাত্র কানাডায় রয়েছে তা না, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রতেও এ ধরনের বাড়িঘর করা হয়েছে। সদ্য অবসর নেওয়া একজন সচিব যিনি সপরিবারে লন্ডনে থাকেন এবং লন্ডনে তিনি বাড়িঘর বানিয়েছেন। এরকম আরেকজন সচিবকে পাওয়া গেছে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়িঘর করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিদেশে বাড়ি করেছে অন্তত ৯ জন আমলা কানাডাতে এবং এই কানাডার বাড়ি এবং ব্যবসা করেছেন সেগুলো সবই অবৈধ উপায়ে অর্জিত বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, তার এটি দুদককে দেবেন এবং দুদক এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এ ব্যাপারে দুদুকের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন যে, তারা এই তালিকাটি চেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে। এখনো তালিকাটা তারা পাননি। তালিকা পাওয়ার পর এটি যাচাই-বাছাই করবেন এবং আরও গভীর তদন্তের পর তারা এ ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।