প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য প্রকাশিত একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ইসরাইলের ধারাবাহিক বিমানহানা এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচতে বহু মানুষ আল–আহলি আল–আরবি হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বহু নারী এবং শিশু। তারা কল্পনাও করতে পারেননি অ্যাংলিকান গির্জার মালিকানাধীন ওই হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে আছড়ে পড়বে ক্ষেপণাস্ত্র! তেল আবিব উত্তর এবং মধ্য গাজ়ার বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়ার ‘চরম সময়সীমা’ দেয়ার পরে ওই হাসপাতালকেই ‘নিরাপদ’ ভেবেছিলেন তারা।
গাজায় ইসরাইল সেনাবাহিনীর হামাসবিরোধী অভিযানের একাদশতম দিনের ওই ঘটনা নিয়ে বুধবার দিনভর চলেছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র চিকিৎসক আশরাফ আল কুদরা বুধবার সরাসরি হাসপাতালে হামলার জন্য ইসরাইল সেনাবাহিনীকে দুষেছেন। অন্য দিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আঙুল তুলেছেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের দিকে। তবে প্রথমে ঘটনার জন্য হামাসকে দুষলেও পরে তাদের নিশানা ‘ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ’ (পিআইজে) নামে একটি গোষ্ঠী।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে বুধবার দিনভর ইসরাইল প্রমাণ করতে চেয়েছে, শনিবার রাতে পিআইজের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আঘাত করেছে আল–আহলি আল–আরবি হাসপাতালে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার তেল আবিবে পৌঁছেই নেতানিয়াহু সরকারের সেই তত্ত্ব সমর্থন করেছেন। নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকে বাইডেন বলেন, ‘আমি যা দেখেছি, তার ভিত্তিতে বলছি, মনে হচ্ছে এটা (গাজার হাসপাতালে হামলা) অন্য কোনো দল করেছে।’ তার পরই নেতানিয়াহুর দিকে তাকিয়ে তার উদ্দেশে বাইডেন বলেন, ‘আপনি নন।’
একাধিক পশ্চিমী দেশও হাসপাতালে হামলা নিয়ে ‘ক্লিন চিট’ দিয়েছে ইসরাইলকে। প্রশ্ন তোলেনি, কেন গত ১২ দিন ধরে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটারের ভূখণ্ডে কয়েক হাজার টন বোমা আর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হেনেছে তেল আবিব।
তবে পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশ অভিযোগের আঙুল তুলেছে নেতানিয়াহু বাহিনীর দিকেই। পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, শনিবার রাতের হামলায় যে ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে, তা বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র পিআইজের হাতে নেই। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ভাবে এই পরিস্থিতিতে বুধবার জর্ডনের রাজা আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতাহ আল-সিসি এবং ফিলিস্তিনির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে পূর্বঘোষিত বৈঠক বাতিল করেছেন বাইডেন।
ইসরাইল সেনাবাহিনীর তরফে বুধবার একটি ভিডিও এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে, সেটি পিআইজের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের হাসপাতালে আঘাত করার ছবি। যদিও সেই ভিডিওতে বিষয়টি স্পষ্ট নয় বলে পাল্টা অভিযোগ। নেতানিয়াহু নিজেও একাধিক পোস্টে হাসপাতালে হামলার জন্য দুষেছেন ‘ফিলিস্তিনি উগ্রদের’। যদিও জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনির প্রতিনিধি রিয়াধ মনসুর তা খারিজ করে বলেন, ‘নেতানিয়াহু মিথ্যাবাদী। হাসপাতালে বিমানহানার পরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল মুখপাত্র একটি পোস্টে লিখেছিলেন, ‘ওই হাসপাতালের পাশে হামাসের ডেরা রয়েছে’। পরে সেই পোস্টটি মুছে দেয়া হয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা