
ডা. আলী জাহান
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক প্রবল মেধাবীএকজন ডাক্তার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সে খবর পুরনো।বাসায় থাকা অবস্থায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে শামসুদ্দিন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল সে খবরও পুরনো। মঙ্গলবার রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। হাসপাতাল ত্যাগ করে তিনি বাসায় ফিরে আসেননি। অনেক কষ্ট বুকে ধারণ করে, অনেক কান্না চেপে রেখে, অনেক হতাশা নিয়ে তিনি সিলেট ত্যাগ করেছেন। সড়কপথে এম্বুলেন্সে করে কয়েক ঘণ্টার যাত্রা শেষে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনা ইউনিটে এখন ভর্তি আছেন। এ খবরও অনেকেই জানেন।
যা অনেকেই জানেন না তা হচ্ছে এই খবরের পেছনের খবর।
এই অধ্যাপকের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী এবং শুভাকাঙ্খীদের সাথে কথা বলে যে ভয়াবহ সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে তাতে যে কেউ ভয়ে শিউরে উঠবে।
মেডিসিনের এই ডাক্তারকে নিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বন্ধু,সহকর্মী এবং প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের স্ট্যাটাস পড়ে বিশাল একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন সামনে চলে এসেছে। সে প্রশ্নটি হচ্ছে, সিলেটে শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেবার ক্ষমতা আসলেই আছে কিনা? নাকি সবকিছুই কথার কথা? কথার ফুলঝুরি!
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, সিলেটের সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের বড় কর্মকর্তার বক্তব্যের সাথে এই হতভাগা মেধাবী ডাক্তারের ঢাকা চলে যাবার কাহিনীর মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কে আসলে সত্য বলছেন?
বলা হচ্ছে সামসুদ্দিন হাসপাতালে করো না রোগীদের জন্য দুইটি আইসিইউ বেড আছে। গলা ফাটিয়ে বলা হচ্ছে এই দুই আইসিইউ বেডের জন্য দুটি ভেন্টিলেটর আছে। ভেতরের খবর হল এ পর্যন্ত এই দুই ভেন্টিলেটার ব্যবহার করা হয়েছে তার প্রমাণ নেই। আইসিইউ ইউনিট পরিচালনা করার জন্য যে জনবল দরকার তাও নেই। ডাক্তার ছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, ওয়ার্ড বয় বা আয়ারা নাকি চাকরি ছেড়ে ভয়ে পালিয়েছে। যখন এই অধ্যাপককে এই ইউনিটে ভর্তি করা হয় তখন তিনি সহ তার পরিবার পুরো ইউনিটের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যান।
গলা ফাটিয়ে বলা হচ্ছে দুটি ভেন্টিলেটর আছে। কোটি টাকার প্রশ্ন হচ্ছে এই দুই ভেন্টিলেটার পরিচালনা করার জন্য প্রশিক্ষিত লোকজন আছে? এর আগে করোনা সন্দেহে এই ইউনিটে কয়েকজন রোগী মারা গেছেন। তাদের ক্ষেত্রে কি এই ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়েছে? যদি না করা হয়, তাহলে কিভাবে বুঝলেন ভেন্টিলেটর কাজ করছে? শুধু দুটি মেশিন বসিয়ে দিলেই হলো? চালাবেন কারা?
পুরো সিলেট বিভাগের লোকসংখ্যা জানি কতো? এক কোটির বেশি হবার কথা। এক কোটি মানুষের জন্য দুইটি করোনা বেড! কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ না দিলে কি খুব বেশি অপরাধ হয়ে যাবে?
অধ্যাপকের পরিবার এবং সহকর্মীবৃন্দ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তাকে সিলেট রাখার জন্য। কিন্তু পরিস্থিতি এ পরিমাণ খারাপ ছিল যে শেষ পর্যন্ত তারা চরম ঝুঁকি নিয়ে সড়কপথে অ্যাম্বুলেন্সে এই অধ্যাপককে ঢাকায় নিয়ে গেছেন। রাস্তায় অনেক কিছুই ঘটতে পারতো। উনি মারাও যেতে পারতেন। সেই ভয় ছিল। সহকর্মীরা চেষ্টা করেছেন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য। হাসপাতালের পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের কারণেই নাকি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় হয়নি।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন যা বলছেন তার সাথে গতকাল ঘটে যাওয়া সিলেটের প্রথম করোনা রোগী মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই ডাক্তারের সহকর্মী বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার সদস্যদের বক্তব্যের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এই যদি হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সহকারী অধ্যাপকের চিকিৎসার দৃশ্য, সিলেটের সাধারণ জনসাধারণ কোন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে তা সম্ভবত আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।
ডা. আলী জাহান
ব্রিটেনে কর্মরত চিকিৎসক