প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে ৩০০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা সম্ভব না, সেটা আমরা জানিয়ে দিয়েছি। পরে কী হবে না হবে, সেটা আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত বিবেচনা করা হবে।’
মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) ভোটার তালিকা হালনাগাদ-২০২০ এর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দলটির কাযনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ইভিএমে ভোটগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সেটি নিয়ে পত্রিকায় আসছে ও আমাদের বক্তব্যগুলো আপনাদের জানানো হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব আমাদের। হয়তো আপনারা বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী একটি বক্তব্য দিয়েছেন ও বিভিন্নজন থেকে বক্তব্য আসতে পারে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নাকি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেছেন, বিষয়টি এখনও স্পষ্ট না। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলা, বিএনপির প্রধান বলা, জাসদের আব্দুর রব বলা এগুলো ভিন্ন জিনিস।’
এ বিষয়ে সিইসি আরো বলেন, ‘আর সব থেকে যেটি আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই তাহলো-অনেকে ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন, সদিচ্ছা ব্যক্ত করতে পারেন। তবে ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ইতিমধ্যে আমরা নিজেরা অনেকগুলো সভা করেছি, আগামীতে আরো সভা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে আমাদের। ভোট স্বাধীনভাবে আমরা পরিচালনা করব যতদূর সম্ভব। এটা আমাদের এখতিয়ারভুক্ত। পদ্ধতিও আমাদের এখতিয়ারভুক্ত। ভোট কোন পদ্ধতি ও কেমন হবে সেটি আমাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা স্বাধীন।‘
সিইসি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপে পড়ছে না কমিশন। কাউকে ভোটের মাঠে আনা কমিশনের কাজ নয়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান কমিশনের মূল দায়িত্ব।
হাবিবুল আউয়াল আরো বলেন, ‘এবার হালনাগাদ কার্যক্রম মোট চার ধাপে শেষ করা হবে। প্রথম ধাপে ১৪০ উপজেলায় ২০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ সময়ে নির্বাচন কমিশনের তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করবেন।’
ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটিতে চার নির্বাচন কমিশনার, ইটিআই মহাপরিচালকসহ প্রশিক্ষণার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দুই বছরের অগ্রিম তথ্যসহ মোট তিন বছরের তথ্য নেয়া হবে। যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০৭ বা তার পূর্বে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যে সব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ বা বেশি তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ কার্যক্রমে ১ জানুয়ারি ২০০৫ বা তার পূর্বে যাদের জন্ম তাদের ২ জানুয়ারি ২০২৩, ১ জানুয়ারি ২০০৬ বা তার আগে যাদের জন্ম তাদের ২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে এবং ১-১-২০০৭ বা তার পূর্বে যাদের জন্ম তাদের ২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে নিবন্ধিত ভোটার হিসেবে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। হালনাগাদে সম্ভাব্য ভোটার বৃদ্ধির হার ৭.৫০ শতাংশ। এ ছাড়া এর আগে বিভিন্ন কারণে যারা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি তাদেরও হালনাগাদে ভোটার করা হবে।
তিনি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে মৃত ভোটরের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। এ সময় ভোটার স্থানান্তরের আবেদনও করা যাবে। ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য যে সব ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে এর মধ্যে রয়েছে- ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পিতা/মাতার এনআইডির ফটোকপি, ইউটিলিটি বিলের কপি। এবারের হালনাগাদ কার্যক্রমে প্রায় ৫৬ হাজার তথ্যসংগ্রহকারী এবং ১১ হাজার ৩০০ সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের দিনব্যাপী হাতে-কলমে নিবিড়ি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা তথ্যসংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।