ট্রান্স ফ্যাট কী, কতটা ক্ষতিকর?

ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডের (টিএফএ) উচ্চ মাত্রায় গ্রহণ সিরাম লিপিড প্রোফাইলে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ফেলে এবং এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।চিকিৎসকেরা বলেছেন, ট্রান্স ফ্যাট বা ট্রান্স-ফ্যাটি অ্যাসিড (টিএফএ) হলো প্রাকৃতিক বা শিল্প উৎস থেকে আসা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। প্রাকৃতিক ট্রান্স-ফ্যাটের মধ্যে রয়েছে দুধ, মাখন, ঘি, গরুর মাংস, ছাগলের মাংসের মতো প্রাণীজ উৎস। যা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে উদ্ভিজ তেলের হাইড্রোজেনেশনের সময় যে ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন হয় তা বেশি ক্ষতিকর। আংশিকভাবে হাইড্রোজেনেটেড এই তেলই শিল্পে উৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস।

সিঙ্গারা, সমুসা, পুরি, বিস্কুট, চানাচুর, চিপসের মতো বেকারি পণ্য যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে সেগুলো তৈরিতে হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া  অনেক স্ট্রিট ফুড যেগুলো কড়া করে ভাজা হয় সেগুলোতেও ট্রান্স ফ্যাট থাকে। এছাড়া রান্নার কাজে একই তেল বারবার ব্যবহার করলেও তাতে ট্রান্স ফ্যাট উৎপাদিত হয়।

চিকিৎসকদের মতে, ট্রান্স-ফ্যাটি এসিড অন্যান্য যেকোনো খাদ্যের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং ‘ভালো’ কোলেস্টেরল কমায়। এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ এরও বেশি মানুষ অসংক্রামক রোগে (এনসিডি) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। যা মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘এনসিডি কান্ট্রি প্রোফাইল, বাংলাদেশ’ অনুসারে ৩০-৭০ বছর বয়সের মধ্যে ২২ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। আর অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ ট্রান্স ফ্যাট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সয়াবিন, পামওয়েলের সঙ্গে হাইড্রোজেন দিয়ে জমাট করে বনস্পতি যা ডালডা নামে পরিচিত বানানো হয়, এই ডালডায় ২৫ থেকে ৪৫ শতাংশ ট্রান্সফ্যাট থাকে। সাধারণত খরচ কমানোর জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, জিলিপি, চিকেন ফ্রাইসহ বিভিন্ন ভাজা পোড়া খাবার তৈরির সময় এসব ব্যবহার করা হয়ে থাকে।ডালডায় ভাজা এইসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশের মানুষ গড়ে কী পরিমাণ ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ করে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য না থাকলেও সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থা ঢাকার স্থানীয় বাজার থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে সংগৃহীত ১২ ধরনের বেকারি বিস্কুট নিয়ে গবেষণা করে এসব নমুনা বিস্কুটগুলোতে ৫ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি পেয়েছে।

গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটরের আবাসিক সমন্বয়ক মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস সম্প্রতি এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা না গেলে বাংলাদেশ থেকে এখন যে খাদ্যপণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়, তা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ।

এদিকে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা কার্যকরে একটি ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ গঠন করা হয়। যেই কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ।

তিনি জানান, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ২০২৩ সালের মধ্যে টিএফএ’র ব্যবহার ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত প্রয়োজন। মতামত পেলেই তারা পরের ধাপে যাবেন।

টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই)’র সহকারী পরিচালক (কৃষি ও খাদ্য- মান উইং) এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ আসে বনস্পতি বা ডালডার মাধ্যমে। এসব ডালডা বেকারিতে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। বাকি ২০ ভাগ আসে প্রাকৃতিকভাবে।

 

পূর্বের খবরমৃত্যুদণ্ড নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের হাত সরিয়ে নেয়া: আসিফ নজরুল
পরবর্তি খবরমিথ্যে দলিলে ভিটে গেছে, প্রাণও গেছে