
ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। করোনা, করোনার উপসর্গ আর চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর অভিযোগ প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরছেন মানুষ। অ্যাম্বুলেন্সেই ঝরে যাচ্ছে বহুপ্রাণ। আপনার করোনা আছে অথবা নেই, সার্টিফিকেট লাগবে। না হয়, আপনি যে রোগেই আক্রান্ত হন না কেন হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেন না।
বহু ঘটনা থেকে যাচ্ছে আড়ালে।
এটা সত্য অনেক চিকিৎসক জানবাজি রেখে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্তও হয়েছেন। তাদের অনেকেই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী পাননি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। যে ব্যর্থতার দায় আসলে চিকিৎসকদের খুব বেশি নয়। সামনের দিনগুলো কেমন যাবে, তা ভেবেই অনেকে আতকে ওঠেছেন। সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা পাননি। একটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মারা গেলেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে প্রথম ১০ দিনে ১০৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এই যখন অবস্থা তখন পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে তা পরিষ্কার নয়। বলা হচ্ছে, মে মাসের শেষ দিক এবং জুনের প্রথম দিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাবে। এরপর কমতে থাকবে। কিন্তু রোগী কমানোর একটি প্রধান শর্ত হচ্ছে, আক্রান্তদের চিহ্নিত করে আলাদা করা। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত টেস্টের হার বেশিরভাগ দেশের তুলনায় কম। শুরুতে পুরো বিষয়টি আইইডিসিআরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন কিছুটা বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু এখনো দিনে ১০ হাজার পরীক্ষার টার্গেটও পূরণ হয়নি। এ যাবত একদিনে সর্বোচ্চ ৭২৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজী বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই পরীক্ষা আরো বাড়ানো প্রয়োজন।
করোনা পরিস্থিতির ব্যাপারে শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটা কথাই বলা হয়েছে, আমরা প্রস্তুত। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যপট যা দৃশ্যমান তা হলো ১. প্রয়োজনীয় সংখ্যক টেস্ট এখনো করানো যাচ্ছে না। ২. টেস্ট করিয়ে অনেককে ফলের জন্য কয়েকদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ৩. হাসপাতালগুলোতে রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কী করতে হবে তা এখন পরিষ্কার। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ব্যবস্থা যা নেয়ার দ্রুতই নিতে হবে। না হয় পরে আপসোস করে লাভ হবে না।