অধিকৃত বায়তুল মোকাদ্দাস ও জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের সংঘর্ষে চার ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত বর্ণবাদী পরিকল্পনা ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’র প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ সংঘর্ষ বাধে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২৮ জানুয়ারি হোয়াইট হাউজে ফিলিস্তিন বিরোধী ওই পরিকল্পনা পেশ করেন যেখানে পুরোপুরি দখলদার ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। এ সময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও তার পাশে উপস্থিত ছিলেন। বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানীকরণ, জর্দান নদীর পশ্চিম তিরের ৩০ এলাকা ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করা, বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ফিলিস্তিন শরণার্থীদেরকে নিজ ভূমিতে ফিরতে না দেয়া, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণ করা প্রভৃতি ট্রাম্পের ঘোষিত ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে, ফিলিস্তিনের সব দল ও সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে ট্রাম্পের ওই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, কখনোই এ প্রস্তাব আমরা বাস্তবায়িত হতে দেব না। ফিলিস্তিনিরা ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ মোকাবেলায় দুটি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তি থেকে তারা বেরিয়ে যাবে এবং দ্বিতীয়ত, যেকোনো মূল্যে ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ বাস্তবায়ন প্রতিহত করা হবে। ফিলিস্তিনিরা যদিও এখনো অসলো চুক্তি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয়নি কিন্তু ট্রাম্পের ঘোষিত প্রস্তাব প্রতিহত করার জন্য তারা এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চলবে এবং ফিলিস্তিনিরা আত্মসমর্পণ করবে না।
এদিকে, গতকাল ভোরে বায়তুল মোকাদ্দাসে একজন ফিলিস্তিনি একটি গাড়ি চালিয়ে একদল ইসরাইলি সেনাদেরকে চাপা দেয়। এতে ১৪জন সেনা আহত হয়। অন্যদিকে, রামাল্লায় এক ইসরাইলি সেনার গুলিতে বেশ ক’জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। কিন্তু তারপরও ফিলিস্তিনিরা ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম থেকে পিছিয়ে আসেনি বরং সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। ফলে পশ্চিম তীরে তিনজন এবং বায়তুল মোকাদ্দাসে একজন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে। এ ছাড়া গত বুধবারও আল খলিল শহরে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে ১৭ ফিলিস্তিনি যুবক শহীদ হয়েছে।
ফিলিস্তিনের রেডক্রিসেন্ট জানিয়েছে, পশ্চিম তীরের বেথেলহাম এলাকায় ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৭৯ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। এরও আগে গত শুক্রবার ১১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়। হামাস মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে, ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’র উদ্দেশ্য হচ্ছে দখলদার ইসরাইলের পক্ষে স্বীকৃতি আদায় করা এবং স্থানীয় ফিলিস্তিনি অধিবাসীদেরকে চিরতরে ওই ভূখণ্ড থেকে বের করে দেয়া। এ কারণে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে যার পরিণতিতে হতাহতের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টও এ বিপর্যয়ের শরীক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।#
পার্সটুডে