কক্সবাজারে আশ্রিত শরণার্থী রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যাচ্ছে শতশত রোহিঙ্গা। এ ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহল উদ্বিগ্ন। স্থানীয়রা জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সরব হলে মিয়ানমারে যেতে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গারা এ পথ বেছে নিয়ে প্রতিদিন শতশত রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন শহরে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার বিষয়টি চীন বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কথা জানতে পেরে, তারা আত্মগোপনে পালিয়ে যাচ্ছ। তিনি বলেন, ৭৮ সালে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই সৌদিয়া, কাতার, দুবাই, বাহরাইন ও ওমানে রয়েছে। তাদের কাছে এখন কাড়িকাড়ি টাকা। তারা তাদের আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে নামে বেনামে দেশের বিভিন্ন জেলাতে জমি কিনে আবাসস্থল গড়ে তুলেছে। ওইসব রোহিঙ্গার মদদে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে এ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
পালংখালীস্থ অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হোসোইন বলেন, ক্যাম্পে কর্মরত কথিপয় সেবাসংস্থার লোকজন প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারাই মুলত রোহিঙ্গাদের উস্কে দিয়ে পালিয়ে যেতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। প্রতিদিন থাইংখালী ও কুতুপালং ক্যাম্প থেকে প্রচুর রোহিঙ্গা নাগরিক পালাচ্ছে। মাঝেমধ্যে পুলিশ ও এপিবিএন তাদের ধৃত করলেও পুনরায় ক্যাম্প এলাকায় ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
কুতুপালং ক্যাম্প এলাকার রাজাপালং ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ইউএনএইচসিআর কর্তৃক রোহিঙ্গাদের কাটাতারের বলয় গড়ে তোলা হলেও কার্যত: সফলতা পায়নি। তারা কোনো না কোনোভাবে কাটাতারের বেড়া পেরিয়ে ক্যাম্প ত্যাগ করছে। চলে যাচ্ছে গন্তব্যস্থানে। তিনি বলেন, একশ্রেণীর পেশাদার পাচারকারী অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়তা করছে।
কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এইচএম এরশাদ বলেন, বর্তমান সরকারের সাথে চীনের সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে চীনের অংশ নেয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে পররাস্ট্রপর্যায়ে কাজ করছে সরকার। এই নিয়ে চীনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে বেশ কয়েকদফা সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। এখবর প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র ও অনিচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যেকারণে রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে ছটকে পড়ছে।
এ বিষয়ে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সঞ্জুর মুরশেদ বলেন, সরকারের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ফন্দি ফিকির করছে। তারা উখিয়া হতে মহাসড়ক ও গ্রামের রাস্তা দিয়ে চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গত মাসেই রোহিঙ্গারারা কয়েকটি পৃথকদলে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন এলাকা হতে প্রায় ৬শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্প ইনচার্জের নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পে অপরাধ নির্মূলে দায়িত্বরত এপিবিএন পুলিশ সুপার সিহাব কায়সার বলেন, রোহিঙ্গারা বেআইনি সমাবেশ করে অপরাধ সংঘটিত করতে দ্বিধা করে না। ক্যাম্পের অভ্যান্তরে একটা না একটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড লেগেই থাকে। এদের এসবের সামাল দিতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে এপিবিএন ব্যাটালিয়ানকে। রোহিঙ্গাদের আটক করা হলেও আশ্রয় ক্যাম্পে ছেড়ে দেওয়ার কারণে দুঃসাহস বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, এক বছরেই বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে এপিবিএন কর্তৃক অস্ত্রও গোলাবারুদ সহ দেড় হাজার রোহিঙ্গা অপরাধীকে আটক করে আইনের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাধ্যুষিত জনপদের স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী এম আয়াজ রবি বলেন, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্টান, হাসপাতাল ও বিভিন্ন সেবা সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা অপরাধীদের জন্য কর্মমুখী কারাগার স্থাপন করা হয়নি। যে কারণে তারা অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে অনায়সে। ফলে বৃহত্তর রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা অপরাধীদের আটকে রাখার পাশাপাশি কর্মমুখী কারাগার নির্মাণের দাবি উঠেছে সর্বমহলে। যেখানে শুধু রোহিঙ্গা অপরাধী বন্দী শিবিরে ভরণপোষণসহ কর্ম শিখার সুযোগ পাবে।
ঢাকাটাইমস