এদিকে দলটির নেতারা প্রথম দফায় তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। কারণ তারা মনে করছেন ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত নেতা ও সংগঠকদের ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও সড়ক-মহাসড়ক কার্যত অচল ছিল, এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও রাস্তাঘাটে লোক চলাচল ছিলো ‘তুলনামূলকভাবে অনেক কম’।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান জানিয়েছেন, সারা দেশে সাঁড়াশি আক্রমণ চলছে। এর মধ্যেও মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া এই তিনদিন বের হয়নি। এর মানেই হলো মানুষ অবরোধকে সমর্থন দিয়েছে। এটিই আমাদের অর্জন।
এদিকে অবরোধের মধ্যেই গত চব্বিশ ঘণ্টায় কেন্দ্রীয় নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জহির উদ্দিন স্বপন ও ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অন্তত ২৭২ জনকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে বলে তথ্য দিয়েছে বিএনপি।
দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলছেন, পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকার পরেও মানুষের জোরালো অংশগ্রহণ আমাদের কর্মসূচিতে দেখছি। সামনেও পরিস্থিতির আলাকে দাবি আদায়ের রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আমরা সফল করব।
২৮ অক্টোবরে নয়াপল্টনের সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন হরতাল পালন শেষে তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি।
তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে বৃহস্পতিবার আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে যা রোববার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়ার কথা।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তফসিল ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসবে বিএনপির কর্মসূচির মাত্রা তত বাড়বে।
যদিও প্রাথমিক ভাবে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের পর ১০-১২ নভেম্বরের দিকে সর্বাত্মক অবরোধের দিকে যাওয়ার চিন্তা করেছিল দলটির নীতিনির্ধারকরা।
কিন্তু ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মীর্জা আব্বাসসহ নেতাকর্মীদের ব্যাপক গ্রেফতারের পর পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে সরাসরি অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
রোববার ও সোমবারের অবরোধ শেষে ৭ নভেম্বর দলটির নিজস্ব কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। এর পর আবারও হরতাল অবরোধের মাধ্যমেই আগামী সপ্তাহ পার করবে দলটি।
এ সপ্তাহে সরকারের অবস্থান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।
আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ কিংবা এর পরের সপ্তাহের শুরুতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা জানালে ওই দিনকে ঘিরে এবং এর আগে ও পরে কী ধরণের কর্মসূচি পালন করা যায় তা নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।
সেলিমা রহমান বলছেন, সরকার রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে গুম, খুন করে ক্ষমতায় থাকতে পারে কিন্তু আমাদেরকেও লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে হবে। এর তো কোনো বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা আসলে জনগণই ঠিক করবে তারা কীভাবে দাবি আদায় করবে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন তা হলো তারা মনে করেন তফশিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তারা তাদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আরও জোরালো করে তুলতে পারবেন এবং এর জের ধরে সরকার ব্যাপকভাবে চাপের মুখে পড়বে বলেই ধারণা করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
তথ্যসূত্র: বিবিসি