করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছা, ঢাকার ৬ চিকিৎসক বরখাস্ত

  • কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল
    কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল

নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ ও কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ঢাকার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসককে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আজ (শনিবার) স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বেলাল হোসেনের সই করা আলাদা দুটি আদেশে এই ছয় চিকিৎসকের সাময়িক বরখাস্তের কথা জানানো হয়।

আদেশে বলা হয়, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের টেলিফোনিক নির্দেশে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর ধারা ১২ মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

অনুপস্থিতি থাকার কারণে সাময়িক বরখাস্ত চিকিৎসকরা হলেন- জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হীরস্ব চন্দ্র রায়, মেডিকেল অফিসার ডা. ডারহানা হাসনাত, মেডিকেল অফিসার ডা. উর্মি পারভিন, মেডিকেল অফিসার ডা. কাওসার উল্লাহ।

অপর এক আদেশে বলা হয়, রোগীদের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে অনিচ্ছা প্রকাশ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের টেলিফোনিক নির্দেশে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ধারা ১২ মোতাবেক জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শারমিন হোসেন এবং আবাসিক চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ ফজলুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

করোনা রোগীর চিকিৎসা (ফাইল ফটো)

আদেশে আরও বলা হয়, এই আদেশে মহাপরিচালকের অনুমোদন রয়েছে এবং এই আদেশ জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী দেখতে অনিচ্ছা প্রকাশ করায় দুজন ও পদায়নের পরবর্তী সময়ে যোগদান না করায় চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এর আগে গত ৯ এপ্রিল কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালককে চিঠি দিয়ে জানান যে, এই ছয় চিকিৎসক কোভিড-১৯ কেন্দ্রে সেবা প্রদান করছেন না। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন, যিনি ইস্তফাপত্র দিয়েছেন। এছাড়া চিকিৎসক, নার্স, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তা/কর্মচারিদের পদায়ন হওয়ার পরও অনেকেই যোগদান করেননি বলেও চিঠিতে জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

গত ৭ এপ্রিল করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী যারা করোনা সেবায় অবদান রেখেছেন, তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং তাদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেন।

তবে, তিনি এও বলেন, ‘যারা কাজ করেন নাই, যারা নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য পালিয়ে আছেন, সেখানে রোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা পায়নি। অন্য সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা পায়নি। তাদের জন্য এই প্রণোদনা নয়। তারা এটা পাবেন না। কেউ যদি মনে করেন, আমাদের এটা দিলে আমরা আসব, আমি বলব, সেটা দিতে হলে, আগামীতে কীভাবে কাজ করেন, আগামী এই যে দুঃসময়টা যাবে, আমরা অবজারভেশনে রাখব, অন্তত তিন মাস তাদের অবজারভেশনে রাখব, সেখানেই দেখব। যদি কেউ সত্যি এভাবে মানুষের সেবা দেন, তার পরে তাদের কথা আমরা চিন্তা করব। কিন্তু, শর্ত দিয়ে কাউকে আমি কাজে আনব না। কারণ যাদের মধ্যে এই মানবতাবোধটুকু নেই, তাদের প্রণোদনা দিয়ে আনার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। যদি বাংলাদেশে সেরকম দুর্দিন আসে, প্রয়োজনে বাইরের থেকে আমরা ডাক্তার নিয়ে আসব, নার্স নিয়ে আসব। কিন্তু, এই ধরনের দুর্বল মানসিকতা দিয়ে আমাদের কাজ হবে না। এটা হলো বাস্তবতা। এই শর্তে আমার কোনো কিছু আসে না। বরং তারা ভবিষ্যতে ডাক্তারি করতে পারবে কি না, সেটাই চিন্তা করতে হবে।’#

পার্সটুডে