করোনায় পোশাক শ্রমিকদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে হাসিনা-রুবানা!

প্রাণঘাতী করোনা যখন চীনকে বিধ্বস্ত করে ইতালিসহ আরও কয়েকটি দেশে আঘাত করে, তখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার জন্মশত বার্ষিকী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। প্রাণঘাতী করোনার ভয়ে দেশের মানুষ যখন উদ্বিগ্ন, তখনো শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মুজিববর্ষের উৎসব পালনে ব্যস্ত। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিক বিশ্লেষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন মহল থেকে করোনার ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পরও টনক নড়েনি শেখ হাসিনার।

পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে স্তব্ধ করে দিয়ে করোনা যখন গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে আঘাত হানে তখন কিছুটা হুঁশ ফিরে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের। কিন্তু সরকারের ঘুম ভাঙতে ভাঙতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনা।

এরপরের দৃশ্যগুলো আরও ভয়াবহ। মুজিববর্ষের কারণে করোনা মোকাবেলার কোনো প্রস্তুতিই নিতে পারেনি সরকার। প্রতিদিন বাড়তে থাকে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। করোনার উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মরতে থাকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কিন্তু, আক্রান্তদের পরীক্ষা বাদ দিয়ে সরকার ব্যস্ত হয়ে পড়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা চাপা দিতে। যেটা সরকার এখন পর্যন্ত করে যাচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা সরকার দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করছে না।

এরপর, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এই ছুটি ঘোষণার প্রধান লক্ষ্য ছিল মানুষকে সচেতন করা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিশ্চিত করা। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাওয়ায় সাধারণ ছুটির মেয়াদও সরকার বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া শ্রমিকদের অনুদান না দিয়ে ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকার।

সর্বশেষ শনিবার সরকারি হিসাবেই দেশের করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি হিসেবে ২ জন মারা গেছে ও নতুন করে ৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতি আসছে। সরকার যদি এখনই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে বাংলাদেশে পরিস্থিতি ইতালি-আমেরিকার চেয়েও খারাপ হতে পারে।

কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো-করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপের পরিবর্তে সরকার এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হঠাৎ করেই দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালিক পক্ষ। শ্রমিকদেরকে বলে দেয়া হয়েছে, রোববার থেকে কারখানায় উপস্থিত থাকতে হবে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই সারাদেশ থেকে লাখ লাখ শ্রমিক ঢাকারপথে রওয়ানা দিয়েছেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে দেখা গেছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা। নারী-পুরুষরা তাদের শিশু সন্তানদেরকে নিয়ে মাইলের পর মাইল পথ পায়ে হেটে ঢাকায় আসছে।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো-ছোট ছোট ট্রাকে করে যেভাবে ঠাসাঠাসি করে বসে আসছে তাতে করোনা ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন বিশেজ্ঞরা। আর পোশাক কারখানা খোলা রেখে সরকার কিভাবে করোনা সংক্রমণ ঠেকাবে এমন প্রশ্নও তুলেছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

অনেকেই মনে করছেন, গার্মেন্টস মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সরকার দেশকে এক ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক যদি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শুরু করে তাহলে বাংলাদেশ পুরোটাই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। তারা বলছেন, দেশের এই ক্রান্তিকালে পোশাক শ্রমিকদের সুদে ঋণ নয় বরং অনুদান দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া করোনা বিস্তার রোধে পোশাক কারখানা বন্ধ রেখে শ্রমিকদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা দেওয়া জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

অ্যানালাইসিস বিডি