
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার ১২ দিন পর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, আইসি লিয়াকত ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিমান্ডে নিয়েছে র্যাব।
ওইদিন র্যাব সদস্যরা কক্সবাজার কারাগার থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৩ পুলিশকে নিয়ে যায়। কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় ওসি প্রদীপ কুমার দাশের হাতে হাতকড়া পরা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
ছবিতে দেখা যায়, প্রদীপের দু’হাতে হাতকড়া পরিয়ে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে কক্সবাজার কারাগার থেকে তাকে নিয়ে যাচ্ছে র্যাব। মূহুর্তের মধ্যে এই ছবিটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিজেদের ফেসবুক পেজে ছবিটি পোস্ট করে নানান মন্তব্য করেন।
একজন লিখেছেন, এমন একটি ছবি দেখতে চেয়েছিল বাংলাদেশ।
আরেকজন লিখেছেন, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
জসিম আজাদ নামের একজন ছবিটি পোস্ট করে লিখেছেন, ক্ষমতার সেকাল, একাল।
এমডি তারেক রহমান নামের একজন লিখেছেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না।
মহসিন কাজী লিখেছেন, খুন আর নির্যাতনে যে দু’টি হাত দক্ষ, আজ সেই হাতেই হাতকড়া।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান লিখেছেন, শকুনের বাচ্চা তোর ফাঁসি চাই, তোর রক্ষা নেই।
ওমর ফারুক চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, যে প্রদীপ ২০৪ জন মানুষকে এভাবে হাতকড়া পরিয়ে ক্রসফায়ার দিয়েছেন, আজকে তার নিজের হাতেই হাতকড়া! ক্ষমতার দাপট চিরস্থায়ী নয়। আমি, তার ক্রসফায়ার চাই না, তবে তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
হাবিবুর রহমান লিখেছেন, বর্তমান সময়ের খলনায়ক, ওসি প্রদীপ। আমিন উদ্দিন চৌধুরী আমিন লিখেছেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, কথাটি অনেকবারই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু কেউই শিক্ষা গ্রহণ করে নাই।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।
সিনহা হত্যা মামলায় এ নিয়ে মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো, যাদের মধ্যে তিনজন ছাড়া বাকি সবাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
এদিকে মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে টেকনাফের অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার বরখাস্ত ওসি প্রদীপসহ তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়ে গেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অন্য দুইজন হলেন পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের জলতরঙ্গ রিসোর্টে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে লে.কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ঘটনার মূল সাক্ষী শিপ্রা ও সিফাতের কম্পিউটার ডিভাইসসহ ২৯টি সামগ্রী কক্সবাজারের রামু থানায় পুলিশের হেফাজতে রক্ষিত আছে। বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যম উক্ত সরঞ্জামাদি র্যাব হেফাজতে নেয়া হবে। কারণ, মামলা তদন্তের স্বার্থে ওই কম্পিউটার ডিভাইসগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেবে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের চার সদস্য ও সন্দেহভাজন তিন আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। দক্ষ ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে এই মামলা তদন্ত করছে র্যাব। যা তদন্তে শেষ হলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৩ আসামিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ওসি প্রদীপসহ যে তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে তাদের মধ্যে পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করা হয়েছে। ওসি প্রদীপকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অন্য চার পুলিশ সদস্য ও তিন সাক্ষীকে আগেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছি আমরা।
সোমবার রাতে টেকনাফের এপিবিএনের ফাঁড়ি থেকে এপিবিএনের তিন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তাররা হলেন- এপিবিএনের এএসআই শাহজাহান, কনস্টেবল রাজীব ও আব্দুল্লাহ।
পরে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সিনহা যেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন, এই তিনজন তখন এপিবিএনের শামলাপুর টেকপোস্টে দায়িত্বরত ছিলেন।
তিনি বলেন, সিনহা হত্যার ঘটনায় যারা সক্রিয়ভাবে জড়িত; তাদের সঙ্গে এই তিনজনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি