কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা ব্যক্তিকে সিসি টিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন। যদিও তাকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ইকবাল কুমিল্লা মহানগরীর সুজানগর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। তাকে গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট কাজ করছে।
এদিকে, সিসিটিভির ফুটেজে সন্দেহভাজন এই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করেছেন তার ভাই রায়হান ও মা বিবি আমেনা। তারা দাবি করেছেন, ‘ইকবালের মানসিক সমস্যা আছে। সে পাগল। খাবারের লোভ দেখিয়ে তাকে যে যাই বলে সে তাই-ই করে।’
ইকবালের ভাই রায়হান গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমার ভাই পাগল। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে খেলার মাঠে তাকে নিয়ে ছেলেরা দুষ্টামি করায় সে সবাইকে জুতা দিয়ে মেরেছিল। যে মানুষ মাকে পাথর নিয়ে মারতে চায় সে বুঝে শুনে এমন কাজ করার কথা না। ওকে চা-পানি, নাস্তা করালে যা বলবে তাই করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার ভাই যদি অন্যায় করে থাকেন, যদি তা সত্য হয়, তাহলে তার শাস্তি হোক। তবে ইকবাল কারও প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারেন।’ ইকবালের মা বিবি আমেনা ছেলের এমন কাণ্ডে বিব্রত জানিয়ে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘ইকবাল মানসিকভাবে অসুস্থ। কিছুদিন আগেই বখাটেপনার কারণে গণপিটুনির শিকার হন ইকবাল। এরপর থেকে তার আচরণে সবাই অতিষ্ঠ। সে বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে মানুষকে হয়রানি করতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইকবাল গোসলখানায় দরজা বন্ধ করে ইয়াবা সেবন করতো। ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতো। বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেতো। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিল। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ইকবালকে পেলে আপনারা বিচার করবেন। এই সন্তানের জন্য আমার পরিবারটা শেষ হয়ে গেছে।’
ইকবালের নানি রহিমা বেগম সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘১৩ দিন আগে ঘর থেকে ইকবালকে বের করে দিয়েছি। ব্লেড দিয়ে পাঁচটি হাঁস জবাই করেছে। ইকবালের অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ।’ বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ১০ বছর ধরে ইকবালকে চিনি। সে রঙের কাজ করত। মাঝে মাঝে নির্মাণকাজের সহযোগী হিসেবেও কাজ করত। ইকবাল ইয়াবা সেবন করায় প্রায়ই তাকে নিয়ে অনেক দেনদরবার করতে হতো।
এ ঘটনায় বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি। এতে দেখা যাচ্ছে এক যুবক মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে রাস্তার দিকে আসছে। কিছুক্ষণ পর (প্রায় এক ঘণ্টা পর) দেখলাম তার হাতে কোরআন শরিফ নেই। হনুমান ঠাকুরের গদা কাঁধে নিয়ে তিনি ঘোরাঘুরি করছেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি গতকালও বলেছি তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই যুবক মোবাইল ব্যবহার না করার কারণে তাকে ট্র্যাক করা যাচ্ছিল না। এখন পর্যন্ত তিনি ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছেন। আমরা তাকে নজরদারিতে রেখেছি। যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হবে।’
বিডি-প্রতিদিন