ক্রিকেট জীবনের তুখোর ফাস্ট বোলার । যার বলের ক্ষিপ্রতায় উড়ে গেছে বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানের উইকেট। যাকে দেখলেই গলা শুকিয়ে যেত ২২ গজের সিংহের। দেশের রাজনৈতিক ইনিংসের ৮ লাখ ৮১ হাজার ৯১৩ বর্গকিমির মাঠে কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে ফেললেন পাকিস্তানের প্লেবয় ক্রিকেটার কাম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ক্ষমতার মাঝ ক্রিজেই (৩ বছর ৮ মাস) ‘রানআউট’র কলঙ্ক নিয়ে মাঠ ছাড়তে হচ্ছে পাকিস্তানের একসময়কার বিশ্বচ্যাম্পিয়নের শিরোমণি ইমরান খানকে। দলে ভাঙন আগেই ধরেছিল, মঙ্গলবার প্রতিপক্ষ পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টোর স্পিনে ধসে পড়া জোট ‘উইকেট’ হারিয়ে রীতিমতো প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে ইমরান খান।
ভাগ্যের সুতো ছেঁড়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আজ, কাল, না হয় ৩ এপ্রিল। পূর্বনির্ধারিত আস্থা ভোটের দিন। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সংসদে ভোটাভুটির ইমরানকে ছেড়ে গেলেন তার দলের প্রধান জোটসঙ্গীও! ডাক দিয়েছিল
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরের শত্রু মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তানের (এমকিউএম) নীতিনির্ধারকদের যদি দ্রুত আবার জোটে ফেরাতে না পারেন তো পতন নিশ্চিত। পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি অবশ্য তাৎক্ষণিক এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ‘বিরোধী জোট ইতোমধ্যেই ঐক্যবদ্ধ এবং এমকিউএম নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছে।’
আগামী ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সংসদে আস্থা ভোট। সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ৩৪২। ম্যাজিক ফিগার ১৭২। অর্থাৎ ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইমরান খানের প্রয়োজন ১৭২টি ভোট। ইমরান খানের দল ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ’র (পিটিআই) জোট শরিক এমকিউএমের ভোট ছিল ৭টি। এমকিউএম বিরোধী দলের সঙ্গে হাত মেলানোর পর ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলের পক্ষে সংসদ সদস্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭। ইমরানের সমর্থনে আছেন ১৬৪ জন সদস্য। সংখ্যার এই সমীকরণ জারি থাকলে ইমরানের সরকার গদিচ্যুত শতভাগ নিশ্চিত।
সবমিলিয়ে শেষ মুহূর্তে নাটকীয় কোনো পটপরিবর্তন না ঘটলে, জীবনের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের স্বাদ নিদে হবে ইমরান খানকে। সারা দেশে পাওয়ার শো, ইসলামাবাদের প্যারেড ময়দানে গণসমাবেশ- কিছুতেই শেষরক্ষা হলো না। এমনও শোনা যাচ্ছে, সম্ভবত সংসদের বাইরেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন ইমরান খান। তবে এর উল্টোপিঠও কম একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় দৈনিক ডনের খবর মোতাবেক, ৩ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির দিন পিটিআই এমপিদের কেউই যেন উপস্থিত না থাকেন। থাকলেই ভোট দেওয়া থেকে যেন বিরত থাকেন। মঙ্গলবার শেষবেলাতেই শেষ রক্ষাকবচ হিসাবে দলীয় এমপিদের উদ্দেশে এ নির্দেশ দেন ইমরান খান। গদি রক্ষার এই শেষচেষ্টা কতটুকু সফল হবে তা নিয়েও চিন্তার ভাঁজ খোদ দলের অন্দরমহলেই। সরকারি এমপিরা চুপ থাকলেও বিরোধীরা কি বসে থাকবেন? তাদের ভোট তো পড়বেই।
২৮ মার্চ পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা। তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশে নেতৃত্ব দেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ । তখন থেকেই শুরু হয় জল্পনা। আগামী সাত দিনের মধ্যেই পদত্যাগ করতে পারেন ইমরান। নয়া প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর নেতা তথা নওয়াজের ভাই শাহবাজই।