বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টিকারী দিন। সেদিন থেকে বিভক্তিও পায় নতুন মাত্রা। বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু ২১শে আগস্টের ঘটনাপ্রবাহে হাজির করলেন নতুন তথ্য। তার দাবি, ওই ঘটনার পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাকে পাঠিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘যখন ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলো, আমি সেদিন ছিলাম দিল্লি। আমাকে তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইমার্জেন্সি ডেকে নিয়ে আসলেন। পরদিন ২২শে আগস্ট সকালে আমি ঢাকা আসি। ২৩শে আগস্ট থেকে পরবর্তী মাসের ৭/৮ তারিখের ভেতরে খালেদা জিয়া অন্তত ৫/৬ বার আমাকে শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন।’
সম্প্রতি নিজ ব্যবসায়িক কার্যালয়ে মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
মানবজমিনের প্রধান বার্তা সম্পাদক সাজেদুল হক ও স্টাফ রিপোর্টার নূরে আলম জিকু সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন। সঙ্গে ছিলেন আলোকচিত্রী জীবন আহমেদ। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ২৩শে আগস্ট ঘুম থেকে উঠে শুনলাম যে আমাকে দুপুর ২টার দিকে বেগম খালেদা জিয়া যেতে বলেছেন। যাওয়ার পর অনেক কথা হলো। খালেদা জিয়া আমাকে বললেন, আপনি ওনার (শেখ হাসিনা) কাছে যান। ওনাকে বুঝান। এরপর আমি কমপক্ষে ৫/৬ বার তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘এখন তো এভাবে কেউ যেতে পারবে না। আমিওতো যেতে পারবো না।’
এক সময় দুই দলেরই ঘনিষ্ঠ ছিলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। কিন্তু সমাজ আজ বিভক্ত। সে সময় আর নেই। বিষয়টি কীভাবে দেখেন? জবাবে এফবিসিসিআই’র সাবেক এই সভাপতি বলেন, চলমান বিভক্তি সমাজের জন্য অনেক খারাপ, একটা দেশ, রাষ্ট্রের জন্য অনেক খারাপ। আপনার বাড়িতে যদি ৩ ভাই থাকে, আপনারা যদি সারাক্ষণ ঝগড়া করেন, অন্যরাতো আপনাদের শ্রদ্ধা করবে না। একটা বিভাজিত ও বিভক্ত সমাজ কখনো উন্নতি করতে পারে না। এই বিভাজনের জন্য বিএনপি যে একদম দায়ী নয়, তা বলবো না। তবে সবচেয়ে বেশি দায়ী, ৯৯ ভাগ দায়ী আওয়ামী লীগ। তারা আছেই ডিভাইড এন্ড রুলের তালে। তিনি আরও বলেন, আমি যখন আওয়ামী লীগে ছিলাম সরাসরিই ছিলাম। তখনতো বিএনপির সঙ্গে মেলামেশা করতে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আবার যখন বিএনপিতে আসছি তখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। এমনতো না যে যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু এখন রাজনীতির মাধ্যমে সমাজটাকে যেভাবে বিভক্ত করা হয়েছে একপক্ষের সঙ্গে থাকলে আরেকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাই বড় মুশকিল। তাহলে মনে করবে আপনি ওই দলে যাচ্ছেন, আপনাকে আর বিশ্বাস করবে না। আমাদের নোয়াখালীতে একটা কথা আছে, ‘তখন আপনার আমও যাবে ছালাও যাবে।’
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সমাজে কিছু লোক থাকা দরকার নিরপেক্ষ। যেমন জয়প্রকাশ নারায়ণ। তিনি যখন কথা বলতেন ভারতের সবদলের লোকেরা তা শুনতো। আমাদের দেশে তেমন লোক কোথায়? আমাদের বুদ্ধিজীবীরা হয়ে গেছে বিবৃতিজীবী, ব্যবসায়ীরা হয়ে গেছে লুণ্ঠনকারী ও দুর্নীতিবাজ। রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তারা লুণ্ঠন ছাড়াতো কিছু করছে না। কতোজন ভালো ব্যবসায়ী এখন টাকা কামাচ্ছে? যারা রিয়েলি ভালো ব্যবসায়ী এমন কয়জন আছে। আমি তো খুব কম দেখি। সব সরকারের সঙ্গে লাইন।
অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি, মানুষে মানুষের সম্পর্ক প্রতিটি আঙ্গিকেই পরিস্থিতি আগে থেকে খারাপ হয়েছে বলে মনে করেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তবে নিজের জীবনের পেছনে তাকিয়ে কোনো অনুশোচনা বা দুঃখবোধ নেই তার। বলেন, ভালোমন্দে আমাদের জীবন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি আমার দেশে ফিরে এসেছি। ফাইট করে যাচ্ছি। ১৯৮৫ সন থেকে রাস্তায় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। নিজেকে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলে দাবি তার। বলেন, আমি কাজ করতে পছন্দ করি। এখন যে কাজ করছি ওখানেও (আওয়ামী লীগে) একই কাজ করেছি।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বাংলাদেশের রাজনীতির অন্দরমহলের প্রভাবশালী মানুষ হিসেবে পরিচিত। চাকরি, ব্যবসা এবং রাজনীতি তিন ক্ষেত্রেই সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অনেকদিন হলো বিএনপির রাজনীতিতে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।