‘বিএনপি নির্বাচনেও যাবে না, সংলাপেও না’ দলটির নেতাদের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘আপনাদের কে ডেকেছে সংলাপে।’ তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা উচ্চ আদালতের আদেশে জাদুঘরে, নির্বাচন হবে সংবিধান মেনে।
বুধবার (৩ নভেম্বর) বিকালে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। দলের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না’ দলটির নেতাদের এমন মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেবেন কি নেবেন না সেটা আপনাদের ব্যাপার। নির্বাচন সময়মত সংবিধান অনুসারে হবে। সময় আর স্রোত যেমন কারও জন্য অপেক্ষা করে না, নির্বাচনও কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। বিএনপি নির্বাচনে এলো কি এলো না সেটার ওপর নির্বাচন নির্ভর করে না।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে ওবাদুল কাদের বলেন, ‘এখন বড় বড় গলায় কথা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেব না, সংলাপেও যাব না। আপনাদের কে ডেকেছে সংলাপে। শেখ হাসিনা এত উদার, গতবার সংলাপ ডেকেছিলেন। সেটায় আপনারা কী জবাবটা দিয়েছেন। সেই সংলাপের পর আপনাদের ভূমিকা কী ছিল। আপনাদের কেউ সংলাপে ডাকছে না। নিজেরাই আগ বাড়িয়ে সংলাপের কথা বলছেন।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব আপনাকে পরিষ্কার বলে দিতে চাই, যতই হাঁক-ডাক করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশে জাদুঘরে চলে গেছে। জাদুঘর থেকে তা আর ফিরবে না। নির্বাচন হবে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো সংবিধান মেনে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাজনীতির মঞ্চে পুনর্বাসিত করেছে মুক্তিযুদ্ধের মুখোশধারী জিয়াউর রহমান। কাজেই বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার দল নয়, মুখোশধারী মুক্তিযোদ্ধার দল। এই দল গণতন্ত্রের দল নয়, বর্ণচোরা গণতন্ত্রের দল।’
ওবায়দুর কাদের বলেন, ‘আজকে সাম্প্রদায়িক শক্তি যে তাণ্ডব চালাচ্ছে, কিছুদিন আগেও চালিয়েছে। তার বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির ছাতাতলেই আজকে এরা আস্ফালন করছে। আজকে বাংলাদেশে আমাদের প্রথম শত্রু হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের যে চারা জিয়াউর রহমান বপন করেছিলেন তা আজকে ডাল-পালা বিস্তার করে ফেলেছে। এই বিষবৃক্ষকে উৎপাটন করতে হবে, ৩ নভেম্বর আমাদের সেটাই শপথ।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম কথা বলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৮১ সালের মে মাসে সেনাসদস্যেরই একটি বিদ্রোহী গ্রুপ জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ে কীভাবে সেই লাশ গেল তারপর আর সেই লাশের খবর নেই। ঢাকার কফিনে লাশ ছাড়া জিয়াউর রহমান।’
এ সময় জিয়াউর রহমান ও পাকিস্তানের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হকের মৃত্যুর দুটো ভিন্ন প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের কী করুণ পরিণতি দেখুন। ১৯৮৮ সালে আগস্ট মাসে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হক নিহত হন বিমান দুর্ঘটনায়। আর জিয়াউর রহমানকে তার নিজস্ব লোকেরা হত্যা করে। একটা কফিন ঢাকায় আর একটা কফিন ইসলামাবাদের ফয়সান মসজিদের সামনে। দুটি কফিনই ফাঁকা, লাশ নেই। এখানে জিয়ার লাশ নেই আর ওখানে জিয়া্উল হকের লাশ নেই। এখানে জিয়া ক্ষমতার মঞ্চকে নিষ্কন্টক করতে কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য অফিসারকে হত্যা করেছে। আর ওখানে জিয়াউল হক জুলফিসার আলী ভুট্টোর ক্ষমতা পথ রুদ্ধ করতে ফাঁসি দেন। দুটোই ফাঁসির ঘটনায়, পরিণতি দেখুন।’
১৫ আগস্টের খুনিরা আর নেপথ্যের খুনি জিয়াউর রহমান একই অপরাধে অপরাধী দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘৩ নভেম্বরের হত্যা সংঘটিত করে ১৫ আগস্টের খুনিদের বিদেশে পাঠিয়েছিল তৎকালীন সেনাপতি জিয়াউর রহমান। বিদেশি দূতাবাসে তাদের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন তিনি। তাহলে কি তিনি এমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন?’
কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যার খুনিদের বাঁচাতে মোশতাক যে অর্ডিন্যান্স করেছিলেন তাকে আমাদের পবিত্র সংবিধানে বৈধতা দিয়েছিল তারই সেনাপতি জিয়াউর রহমান। ইতিহাসের এমন নির্মম সত্যকে কি মির্জা ফখরুল অস্বীকার করতে পারবেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ইতিহাসের অনেক অজানা সত্য ১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে পাওয়া যাবে। সেই সত্য উন্মোচন করার দিন এসেছে। নতুন প্রজন্ম নেই ইতিহাস জানতে চায়।’
এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
ঢাকাটাইমস