আদালতে আবদুল্লাহর স্বীকারোক্তি

সিনহা হত্যা মামলা

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এপিবিএন সদস্য কনস্টেবল আবদুল্লাহ। বুধবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে তিনি এ স্বীকারোক্তি দেন। পাশাপাশি ঘটনার বর্ণনাও তুলে ধরেন। এ মামলার আসামিদের মধ্যে আবদুল্লাই প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন।

এদিন বিকাল ৫টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি বহর তাকে আদালতে হাজির করে। পরে রাত ৮টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ যুগান্তরকে বলেন, কক্সবাজারের ১৬ এপিবিএনের তিন পুলিশ সদস্যকে সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শনিবার (২২ আগস্ট) রিমান্ডে নিয়ে যান।

তাদের তিনজনের ২৮ আগস্ট রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে কনস্টেবল আবদুল্লাহ ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় তাকে বুধবার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ মামলায় কক্সবাজারের ১৬ এপিবিএনের অপর দুই সদস্য হলেন- এএসআই শাহজাহান ও কনস্টেবল রাজীব। তারা বর্তমানে ৭ দিনের রিমান্ডে র‌্যাব-১৫ এর হেফাজতে রয়েছেন। ১৭ আগস্ট এপিবিএনের তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয় র‌্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে।

পরের দিন ১৮ আগস্ট এ মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। পরে শনিবার (২২ আগস্ট) কক্সবাজার কারাগার থেকে তাদের রিমান্ডের জন্য র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবদুল্লাহ জবানবন্দিতে বলেন- গত ৩১ জুলাই রাতে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান যখন পুলিশের গুলিতে নিহত হন তখন আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। ওই সময় আমি এপিবিএনের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ছিলাম।

রাত আনুমানিক সোয়া ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলী এবং এসআই নন্দলালসহ পুলিশ সদস্যরা চেকপোস্টে উপস্থিত হয়ে যানবাহনে তল্লাশি শুরু করেন।

একপর্যায়ে একটি প্রাইভেটকারকে থামানোর জন্য এপিবিএনের কনস্টেবল রাজিব সিগন্যাল দেন।

পাশাপাশি পরিদর্শক লিয়াকত আলী তার সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় চেকপোস্টের ব্লক দিয়ে ওই গাড়িটির গতিরোধ করেন। তারা গাড়ির আরোহীদের দুই হাত উঁচু করে বের হয়ে আসার জন্য বলেন।

প্রথমে গাড়িতে থাকা সিনহার সহকর্মী সিফাত দুই হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমে আসেন। সঙ্গে সঙ্গেই এপিবিএনের এসআই শাহজাহান তাকে হেফাজতে নেন।

পরে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা সিনহা নিজের পরিচয় দিয়ে গাড়ি থেকে নামেন। এরপর পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী মুহূর্তের মধ্যেই চার রাউন্ড গুলি করেন।

গুলিগুলো ওই ব্যক্তির গলার নিচে, বুকের বাম পাঁজরে প্রায় একই জায়গায় বিদ্ধ হয়।

এতে সিনহা আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমারকে অবহিত করেন।

পরে আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্যের পুনরায় ৪ দিনের রিমান্ড চলছে র‌্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে।

কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫ কার্যালয়ের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২৪ আগস্ট) বিকালে দ্বিতীয় দফায় তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত।

ওই দিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৭ পুলিশের মধ্যে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব-১৫ কার্যালয়ে নিয়ে যান।

আজ তাদের দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।

বাকি ৪ পুলিশ সদস্য- এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তারা কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন বলে জানান কারা সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন।

বুধবার আদালত প্রাঙ্গণে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত অনেকদূর এগিয়েছে। ওসি প্রদীপসহ অন্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর ১৬ এপিবিএনের তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা।

এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আটক করে।

পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রা দেবনাথকে আটক করা হয়। একপর্যায়ে পৃথক মামলায় দু’জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। বর্তমানে তারা দু’জনই জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরিদর্শক লিয়াকত আলী, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় বর্তমানে টেকনাফ থানার ৭ পুলিশ, পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষী ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (১৬-এপিবিএন) তিন পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন।

পাশাপাশি ১৩ জনের মধ্যে এপিবিএনের ৩ পুলিশ সদস্য ৭ দিন করে রিমান্ড ভোগ করলেও বাকি ৭ পুলিশ ও ৩ পুলিশের মামলার সাক্ষী ১১ দিন করে রিমান্ডে রয়েছেন।